পুঁজিবাজারে যে কারণে হঠাৎ সূচকের বড় উত্থান
মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাব আর আস্থা সংকটে থাকা দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচকের রেকর্ড পরিমাণ উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। প্রায় দেড় মাস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার।
ধারাবাহিকভাবে মূল্যসূচক ও লেনদেন বাড়লেও গতকাল সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সব থেকে তেজি ছিল শেয়ারবাজার। ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৮০ পয়েন্ট। এদিন ডিএসইতে লেনদেনও বেড়েছে বড় ব্যবধানে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্রে লেনদেন শেষ হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাতিল করে দেয়া হয়েছে। অনিয়ম করার বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন ভূমিকার কারণে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন পাওয়া দেশীয় ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন গ্রহণ গতকাল থেকে শুরু হয়েছে।
ওয়ালটনের মতো ভালো কোম্পানির আইপিও আসছে শুনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ফলে বাজারে এসবের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো সাড়ে চার ঘণ্টার লেনদেনে পুঁজিবাজারে সূচকের উল্লম্ফন ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএসই ও সিএসইর বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউ?জে গতকাল সকাল থেকেই বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হয়ে ওয়ালটনের আইপিওর জন্য আবেদন কর?ছেন। কো?নো কো?নো বিনিয়োগকারী হাউজগু?লোতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ওয়ালটনের আইপিওর টাকা জমা দিচ্ছেন।
রাহাত নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ওয়ালটনের শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) খুবই ভালো অবস্থানে। এসব দিক বিবেচনায় পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নজর এখন ওয়ালটন হাই-টেকের আইপিও’র দিকে। ওয়ালটন শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভালো লভ্যাংশ পাবেন-এমন প্রত্যাশা করছেন এই বিনিয়োগকারী।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, লেনদেন শুরু হতেই বড় লাফ দেয় মূল্যসূচক। লেনদেনেও দেখা দেয় চাঙাভাব। মাত্র ১০ মিনিটে ডিএসইর শত কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়। শুরুর এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ফলে লেনদেন ছাড়িয়ে যায় হাজার কোটি টাকা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিএসইসি সম্প্রতি কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছু কোম্পানির আইপিও বাতিল করেছে, আবার কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনিয়মের কারণে জরিমানা করেছে। আমি মনে করি, বিএসইসির এই পদক্ষেপ সঠিক আছে। এর একটা ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়েছে।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে। যার ইতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে দেখা যাচ্ছে। এ আস্থা ফেরার ক্ষেত্রে বিএসইসির সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো ভূমিকা রেখেছে।
ডিএসই জানায়, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, যা গতকালের লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
মূলধন বাড়ার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে। গতকাল দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮০ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৫৪৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ১৯শে জানুয়ারির পর সূচকটির সব থেকে বড় উত্থান হলো। ওইদিন ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ২৩২ পয়েন্ট।
গতকাল এক শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে ২৭৭টি কোম্পানির। এরমধ্যে ২৫০টির দাম বেড়েছে ২ শতাংশের ওপরে। ৪ শতাংশের ওপরে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ১৫৪টি। ৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশের ওপরে। ৯ শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে ২৬টির। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১২৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৮৩৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৯২ কোটি ১১ লাখ টাকা।
সিএসইর সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৮৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৮৮ পয়েন্টে। টাকার অঙ্কে সিএসইতে ২৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সিএসইতে ২৭৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। তার মধ্যে ২১০টির দর বেড়েছে, কমেছে ২৯টির। আর ৩৫টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন