পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা চিত্রনায়িকা পরীমনির, প্রত্যাশা সঠিক তদন্ত ও বিচারের
ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার মামলা নেওয়ার পর প্রধান আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। একই সঙ্গে মামলাটির যাতে সঠিক তদন্ত হয়, সেই অনুরোধও করেছেন।
তিনি বলেছেন, তিনি যত দ্রুত সম্ভব আবার কাজে ফিরে যেতে চান। সে জন্য তাকে সাহায্য করার অনুরোধ করেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন পরীমনি।
বিকেল ৩ টার দিকে পরীমনি মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে আসেন।
পরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) হারুন অর রশীদ ও ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান সেদিনের ঘটনার বিষয় ও মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে পরীমনির সঙ্গে কথা বলেন।
তিন ঘণ্টা পর বেরিয়ে এসে পরীমনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে ডিবি পুলিশ ডাকেনি, আমি নিজে থেকেই এখানে এসেছি। আমাকে কাজে ফিরতে হবে। সেই কথাটা কিন্তু কেউ ভাবেনি।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কতটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিলাম সেটা কেবল আমিই জানি। সবাই আমাকে সাপোর্ট করেছে। সবার ভালোবাসা দেখে আমি অভিভূত। আমি এখন উঠে দাঁড়াতে পারছি।’
এ সময় ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, আসামিরা যে যত বড় হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
সাত দিনের রিমান্ডে নাসির ও অমি
পরীমনির করা মামলার আসামিদের মধ্যে দুজন-নাসির ইউ মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে গত সোমবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে ইয়াবা ও মদ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় করা মামলায় নাসির ও অমির সাত দিনের রিমান্ড এবং গ্রেপ্তার তিন নারীর তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) নিবানা খায়ের জেসি এই মঞ্জুর করেন।
তার আগে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের পক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু।
রাষ্ট্রপক্ষের এই কৌঁসুলি আদালতে বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নাসির ইউ মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচজনকে ১ হাজারটি ইয়াবা ও বিদেশি মদসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ইয়াবার উৎস কি, কারা এই মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত, তা জানার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
আসামি নাসির ইউ মাহমুদ আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, নাসির ইউ মাহমুদ ষড়যন্ত্রের শিকার। পুলিশ দেখিয়েছে, তাঁকে উত্তরার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু সত্যটা হচ্ছে, নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মিরপুর থেকে।
পুলিশের দাবি অনুযায়ী, চার বোতল মদ তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর মদপানের লাইসেন্স রয়েছে। তিনি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ইতোপূর্বে তাঁর নামে কোনো মাদকের মামলা হয়নি।
আদালত দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর মাদক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক উদয় কুমার মণ্ডলের বক্তব্য জানতে চান।
তখন এই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, নাসির ইউ মাহমুদ জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য দিয়েছেন। তবে উঁচু মাপের মানুষের কালোদিক বের করার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন পিপি তাপস কুমার পাল, সাজ্জাদুর রহমান শিহাব, হেমায়েত উদ্দিন খান। আর আসামিপক্ষে ছিলেন আব্দুল বাতেন ও হযরত আলী।
পরীমণির মামলা, ৮ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন
গত ৮ জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে পরীমনিকে ধর্ষণ চেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় পরীমনি বাদী হয়ে গত সোমবার নাসির ইউ মাহমুদ ও অমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন।
এই মামলার তদন্ত করে আগামী ৮ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত এই আদেশ দেন। এজাহারভুক্ত দুই আসামি ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী ওরফে অমিকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছে সাভার থানা-পুলিশ। একইসঙ্গে তাঁদের ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
ঢাকা জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। তবে পরীমনির মামলার দুই আসামি ডিএমপির একটি মামলায় এখন রিমান্ডে আছে। যে কারণে ওই মামলায় রিমান্ড শেষ হলে পরীমনির করা ধর্ষণচেষ্টা মামলায় আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য্য করবেন আদালত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন