পুলিশের বিরুদ্ধে স্ত্রীর নির্যাতন মামলাই কাল হয় ইউনুছের

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইউনুছ আলীকে (৩৫) পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। এমনটাই দাবি করছেন তার পরিবারের সদস্যরা। ঘটনার পর থেকে থামছে না ইউনুছ আলীর পরিবার ও ৪ অবুঝ সন্তানের আহাজারি।

সরেজমিনে ইউনুছ আলীর বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী শাহেনা আক্তার’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামীকে গত ৩১ ডিসেম্বর রাতে ফোন করে একটি বিচারে নেয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাতে পরিচিত একজন ফোন দিয়ে জানায় ‘পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধো আমার স্বামী নিহত হয়েছে।’

আমি তাৎক্ষণিক আমার ভাশুরকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। তখন আমি আমার স্বামীকে দেখতে চাইলে পুলিশ দেখতে দেয়নি। উল্টো বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। পুলিশের এমন ব্যবহার দেখে আমার ভাশুর আমাকে নিয়ে চলে আসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, আমাদের এলাকার অত্যন্ত ভাল এবং সমাজসেবক লোক ছিলেন ইউনুছ আলী। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা নির্বাচনে এলাকাবাসীর পছন্দের প্রার্থী ইউনুছ আলী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। দলমত নির্বিশেষ সকলে তার জন্য কাজ করে বিপুল ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

তবে একটি বিশ্বস্থ্য সূত্র জানায়, ইউনুছ আলী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি চুনারুঘাট পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ফলে বিভিন্ন সময় পুলিশ বাদী মামলায় বেশির ভাগ আসামি হিসেবে তার নাম থাকতো। চুনারুঘাট থানা পুলিশ প্রায় সময়ই ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে ইউনুছ আলীর পরিবারের লোকজনের উপর। কয়েক মাস পূর্বে চুনারুঘাট থানা পুলিশ ইউনুছ আলীর বাড়িতে তল্লাশী চালায়।

এ সময় সেখানে তাকে না পেয়ে ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর ও ইউনুছ আলীর স্ত্রী শাহেনা আক্তারকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। এসময় স্থানীয় লোকজন আহত অবস্থায় শাহেনাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ব্যাপারে গত বছরের ৬ আগস্ট শাহেনা আক্তার চুনারুঘাট থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন, এসআই সাজিদ মিয়া, এসআই আতিকুল আলম খন্দকার, এসআই রিপন বড়ুয়া, এসআই জোসেফের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। এই মামলাই কাল হয়ে দাঁড়ায় শাহেনা আক্তার ও তার পরিবারের। শাহেনার দায়েরকৃত মামলার কারণে চুনারুঘাট থানা পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

এ ব্যাপার চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আজমিরুজ্জান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে, তার মৃত্যুর পর থেকে থামছে না তার পরিবার ও অবুঝ চার শিশু সুমি আক্তার (১০), সাফিয়া (৮), তানিয়া (৬), একটি অবুঝ ছেলে ৪ বছর বয়সী ফাহমিদের কান্ন। সেই সাথে তাদের জীবনও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাবা হারানো এই চার শিশুর কান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।