পুলিশ ও প্রশাসনের যে ৯২ কর্মকর্তার প্রত্যাহার চাইল বিএনপি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে পুলিশের শীর্ষ ৭০ এবং জনপ্রশাসনের ২২ জন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এই ৯২ কর্মকর্তার একটি তালিকা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দিয়েছে দলটি।
এসব কর্মকর্তাকে বিতর্কিত উল্লেখ করে তাদের প্রত্যাহারসহ নির্বাচনী সব ধরনের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখারও দাবি জানিয়েছে দলটি। এই তালিকায় রয়েছেন পুলিশের ডিআইজি, এডিশনাল আইজি, অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা, এসপি এবং ডিসি। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিবের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ দাবি সংক্রান্ত একটি চিঠি নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের কাছে দেয় দলটির একটি প্রতিনিধি দল। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। চিঠিতে বিএনপির মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষর রয়েছে।
যে ৭০ জন পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহার চাইল বিএনপি
এই তালিকায় রয়েছেন এডিশনাল আইজিপি (প্রশাসন) মোখলেছুর রহমান, র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, এডিশনাল আইজি (টেলিকম) ইকবাল বাহার, ডিআইজি (নৌ পুলিশ) শেখ মো. মারুফ হাসান, ডিআইজি সিলেট রেঞ্জ মো. কামরুল আহাসান, ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ খন্দকার গোলাম ফারুক, ডিআইজি খুলনা রেঞ্জ মো. দিদার আহমেদ, ডিআইজি রাজশাহী রেঞ্জ এম খুরশিদ হোসেন, কমিশনার (ডিআইজি কেএমপি) হুমায়ুন কবির, ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, কমিশনার (ডিআইজি) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ মাহবুবুর রহমান রিপন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি, ঢাকা) মীর রেজাউল আলম, ডিআইজি (সিটি এসবি ঢাকা) মোহাম্মদ আলী মিয়া, ডিআইজি (রংপুর রেঞ্জ) দেবদাস ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি ডিএমপি) কৃঞ্চপদ রায়, ডিআইজি (পুলিশ হেডকোয়ার্টাস) হাবিবুর রহমান, ডিআইজি (অপারেশন পুলিশ হেডকোয়ার্টাস) আনোয়ার হোসেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পলিশনের কমিশনার হাফিস আক্তার, ডিআইজি (ট্রেনিং) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অরিরিক্ত কমিশনার (ডিএমপি) আবদুল বাতেন, র্যাব-৪ এর এডিশনার ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, যুগ্ম কমিশনার (ডিএমপি) শেখ নাজমুল আলম, এডিশনার ডিআইজি (খুলনা রেঞ্জ) একে এম নাহিদুল ইসলাম, এডিশনাল ডিআইজি (খুলনা রেঞ্জ) মো. মনিরুজ্জামান, এডিশনার ডিআইজি (সিলেট রেঞ্জ) জয়দেব কুমার ভদ্র, এডিশনাল ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) মো. আসাদুজ্জামান, জয়েন কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম, এসপি মোল্লা নজরুল ইসলাম, এসপি (টুরিস্ট পুলিশ, সিলেট) আলতাফ হোসেন, ডিসি (তেজগাঁও) বিপ্লব কুমার সরকার, ডিসি ডিএমপি হারুন অর রশীদ, ডিসি রমনা মো. মারুফ হোসেন সরকার, ডিসি (সিএমপি) এস এম মেহেদী হাসান, ডিসি (ডিবি, উত্তর) খন্দকার নুরুন নবী, ডিসি (সিএমপি) মো. ফারুকুল হক, ডিসি (কাউন্টার টেররিজম, ডিএমপি) প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, ডিসি (ডিএমপি) এস এম মুরাদ আলী, এডিসি (ডিএমপি) শিবলী নোমান, এসপি (ঢাকা) শাহ মিজান শফি, এসপি (নায়ারণগঞ্জ) মো. আনিসুর রহমান, এসপি (মুঞ্জিগঞ্জ) মো. জায়েদুল আলম, এসপি (নরসিংদী) মিরাজ, এসপি (টাঙ্গাইল) সনজিত কুমার রায়, এসপি (মাদারীপুর) সুব্রত কুমার হাওলাদার, এসপি (ময়মনসিংহ) শাহ আবিদ হোসেন, এসপি (শেরপুর) আশরাফুল আজিম, এসপি (সিলেট) মো. মনিরুজ্জামান, এসপি (বরিশাল) সাইফুল ইসলাম, এসপি (ভোলা) মোক্তার হোসেন, এসপি (খুলনা) এস এম শফিউল্লাহ, এসপি (সাতক্ষীরা) মো. সাজ্জাদুর রহমান, এসপি (বাগেরহাট) পঙ্কজ চন্দ্র রায়, এসপি (যশোর) মঈনুল হক, এসপি (ঝিনাইদহ) হাসানুজ্জামান, এসপি (কুষ্টিয়া) আরাফাত তানভির, এসপি (চট্টগ্রাম) নূর এ আলম মিনা, এসপি (নোয়াখালী) ইলিয়াস শরীফ, এসপি (ফেনী) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, এসপি (কুমিল্লা) সৈয়দ নুরুল ইসলাম, এসপি (রংপুর) মিজানুর রহমান, এসপি (দিনাজপুর) সৈয়দ আবু সায়েম, এসপি (ঠাকুরগাঁও) মনিরুজ্জামান, এসপি (রাজশাহী) মো. শহিদুল্লাহ, এসপি (চাপাইনবাবগঞ্জ) মোজাহিদুল ইসলাম, এসপি (নওগাঁ) ইকবাল হোসেন, এসপি (নাটোর) সাইফুল্লাহ, এসপি (বগুড়া) আশরাফ আলী, এসপি (সিরাজগঞ্জ) টুকুল চক্রবর্তী ও এসপি (পাবনা) রফিক ইসলাম।
যে ২২ কর্মকর্তার প্রত্যাহার চাইল বিএনপি
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ জনপ্রশাসের ২২ জন কর্মকর্তার প্রত্যাহার চেয়েছে বিএনপি। তাদের বিতর্কিত উল্লেখ করে তাড়াতাড়ি প্রত্যাহার করে সব ধরনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহিত দেয়ার দাবি জানায় দলটি। কী কারণে তাদের প্রত্যাহার করা দরকার তাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
নির্বাচন কমিশন সচিবের পদত্যাগের কারণ হিসেবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিতর্কিত ও অতিমাত্রায় প্রচারমুখী। বিসিএস ৮২ বিশেষ ব্যাচের এবং ৮৪ পদের শতাধিক কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে তাকে সচিব পদে পদায়ন করা হয়। তিনি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনেছি। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মহীউদ্দীনের একান্ত সচিব ছিলেন। মহীউদ্দীনের ছেলে ব্যারিস্টার নওফেল এখন আওয়ামী লীগের নেতা। যিনি এখন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে কমিশনে নিয়মিত যাতায়াত করেন। সচিবের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ।
অন্য কর্মকর্তারা হলেন-জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া, ভোলার ডিসি মো মাসুদ আলম সিদ্দিকী, চট্টগ্রামের ডিসি মো. ইলিয়াস হোসাইন, কুমিল্লার ডিসি মো. আবুল ফজল মীর ফেনীর ডিসি ওয়াহেদুজ্জামান, লক্ষ্মীপুরের ডিসি অঞ্জন চন্দ্র পাল, কিশোরগঞ্জের ডিসি সারোয়ার মোর্শেদ চৌধুরী, নরসিংদীর ডিসি সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, টাঙ্গাইলের ডিসি মো শহিদুল ইসলাম, ঝিনাইদহের ডিসি সুরজ কুমার নাথ, খুলনার ডিসি হেলাল হোসাইন, কুষ্টিয়ার ডিসি মো. আসলাম হোসাইন, নড়াইলের ডিসি আঞ্জুমান আরা, ময়মনসিংহের ডিসি ড. শুভাস চন্দ্র বিশ্বাস, জয়পুর হাটের ডিসি মো. জাকির হোসাইন, নওগাঁর ডিসি মিজানুর রহমান, রাজশাহীর ডিসি আবদুল কাদের ও সিলেটের ডিসি কাজী ইমদাদুল হক।
তালিকা জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকারের এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে উনাদের কাছে কিছু দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করেছি। প্রমাণাদিসহ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সরকার কিংবা নির্বাচনী কোনো কর্মকর্তা যে কাজগুলো করতে পারেন না, সেই কাজগুলো অনবরত করা হচ্ছে। তার কয়েকটি উদাহরণ আমরা উনাদের সামনে তুলে ধরেছি এবং এগুলোর প্রতিকার চেয়েছি। ভবিষ্যতে যাতে এসব না ঘটে। আর যারা এসব করেছেন তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন