পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে নারীকে ধর্ষণ, অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৩

পুলিশ পরিচয়ে কক্সবাজার আদালতপাড়া থেকে নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের মামলায় প্রধান আসামিসহ তিনজনকে ১০ অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তবে ওই মামলায় দুই নম্বর আসামি পুলিশ পরিচয়দানকারী মো. রাসেল অধরা থেকে গেছে।

শুক্রবার রাতে নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের নাপিতখালী থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৯ দেশীয় তৈরি বন্দুকসহ ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো— ঈদগাঁওয়ের রমজান আলী মেম্বারের ছেলে বর্তমানে ফকিরাবাজার এলাকায় বসবাসকারী ফিরোজ আহমদ (৪৭) প্রকাশ মোস্তাক ডাকাত লোদা মিয়ার ছেলে নুরুল ইসলাম এবং ঈদগাঁও ইসলামপুর ইউনিয়নের ফকিরাবাজার এলাকার মৃত আব্দুল গনির ছেলে মো. শরীফ প্রকাশ শরীফ কোম্পানি।

ফিরোজ ও শরীফ প্রায় ১২টি মামলার পলাতক আসামি। তাদের বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, পাহাড় কাটা, সরকারি পাহাড় দখল, বনের গাছ কেটে বিক্রি, পরিবেশ ধ্বংস, হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা এবং হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন র‌্যাব ১৫-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল খাইরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের শীর্ষ ডাকাত মোস্তাক এবং হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধের মূলহোতা মো. শরীফ। তারা এলাকার আতঙ্কের নাম। তারা দীর্ঘদিন এলাকায় সন্ত্রাসের রামরাজত্ব কায়েম করে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে নির্যাতনসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। সর্বশেষ ১৪ মার্চ কক্সবাজার আদালত চত্বর থেকে ফিরোজ ও শরিফের নেতৃত্বে এক নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগে মামলা হয়।

কে এই শরীফ

ঈদগাঁও ইসলামপুর ইউনিয়নের ফকিরাবাজার এলাকার মৃত আব্দুল গনির ছেলে মো. শরীফ প্রকাশ শরীফ কোম্পানি।

র‌্যাব বলছে, শরীফ নিজের অপরাধী কর্মকাণ্ড চালাতে অত্যন্ত সুকৌশলে রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করে।

২০১৪ সালে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর ও নৌকার নির্বাচনি অফিসে অগ্নিসংযোগ করে।

সম্প্রতি তার একটি অডিওতে এসব তথ্য বেরিয়ে পড়ে। এ ছাড়া শরীফের অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রকাশ্য দিবালোকে। ২০১৬ সালে ইদ্রিস নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে অপহরণ করে তার হাত কেটে নেয়। উল্টো ইদ্রিসের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে শরিফ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কক্সবাজারে একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করেছে শরিফ ও তার গ্যাং। যার তথ্য প্রমাণ র‌্যাবের হাতে এসেছে। একটি অডিওতে শরিফ নিজেও স্বীকার করেছেন এলাকায় তিনি একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেছেন। যে বাহিনী দিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তিনি। একই সঙ্গে সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকার কথাও অডিওতে বলেছেন শরিফ। তদন্তকালে এসব তথ্য উঠে আসে বলে জানান র‌্যাব প্রধান।

সোনালি এন্ডারপ্রাইজ নামে সিন্ডিকেট তৈরি করে চাঁদাবাজি, সস্ত্রাসী, পাহাড় কাটা, সরকারি পাহাড় দখল, বনের গাছ কেটে বিক্রি, পরিবেশ ধ্বংস, হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, বালি উত্তোলনসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে শরিফ ও ফিরোজ। তার বিরুদ্ধে পরিবেশ ধ্বংস, বনবিভাগের জমি বিক্রি, পাহাড় কাটা, চাঁদাবাজি হত্যাচেষ্টাসহ ৯টি মামলা রয়েছে।

কে এই ফিরোজ:

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, র‌্যাবের তদন্তকালে ফিরোজ প্রকাশ মোস্তাক ডাকাত সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে। ফিরোজ ছিল একসময়ের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কুখ্যাত ডাকাত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, অপহরণ, মানবপাচারসহ দুই ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। কুখ্যাত এ ডাকাত একটি মামলায় সাজা পেয়েছে। পরে জামিনে এসে ফিরোজ নাম ধারণ করে আবারও অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

মোস্তাক ডাকাত গোমাতলীতে হাফেজ মিয়ার ঘোনা দখল বেদখল নিয়ে একাধিক হত্যার সঙ্গে জড়িত। ১৯৯৭ সালে খুটাখালীতে ডাকাতি করতে গিয়ে জনগণের হাতে ধরা পড়েন। ২০১৬ সালে সাগর পথে মালয়েশিয়া মানবপাচার করে ফিরোজ আবারও সামনে আসেন। এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রির জন্য যুবক, বাচ্চা এবং মেয়েদের নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করেছেন। ফিরোজের একটি অডিও র‌্যাবের হাতে আসে। যে অডিওতে সে নিজেও স্বীকার করেছেন তার বিরুদ্ধে দুই ডজনের মামলা রয়েছে। এবং একটি মামলায় সে সাজা পেয়েছে।

১৪ মার্চ কক্সবাজার শহরে এক নারীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণের পর নারীকে নিজের স্ত্রী দাবি করে ভূঁয়া ও ভিত্তিহীন কাবিননামা তৈরি নারীর সঙ্গে নিজের বৈবাহিক অবস্থান নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেন। পরে র্যা বের তদন্তে নারী তার স্ত্রী নয় সেটি বেরিয়ে আসে।

পরে ওই নারীকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে ফোন করেন ফিরোজ। তারও আগে ফিরোজের নির্দেশনায় ওই নারীর মুখমণ্ডল ধারালো ছুরির আঘাতে বিকৃত করে তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা।

এ বিষয়ে র‌্যাব ১৫-এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল খাইরুল ইসলাম বলেন, এই দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর সহচর অপরজন। তাদের গ্রেফতারের পর ঈদগাঁওতে হত্যা, অপহরণ, ঘুম, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি,পরিবেশ ধ্বংস, মাদক ব্যবসা, চুরি, পাহাড় কাটা, বন ধ্বংসের মতো সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড কমে আসবে।

অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করা হবে বলে জানান র‌্যাব প্রধান খাইরুল ইসলাম।