পুলিশ পিছু নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পানের বরজে বিএনপি সভাপতির লাশ!

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে পুলিশ পিছু নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতির লাশ পানের বরজে পাওয়া গেছে। তার নাম মাহতাব আলী মণ্ডল (৬০)।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ তাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। তবে পুলিশের দাবি, বিএনপির ওই নেতার হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে।

মাহতাব উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তার বাবা মৃত সমশের মণ্ডল।

শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে স্থানীয় পুলিশ গ্রামের একটি পানের বরজ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে।

স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে। মাথায় ও গলার ডান দিকে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন তারা।

তবে পুলিশ বলছে, হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন মাহতাব। এ ঘটনায় হরিণাকুণ্ড থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। দুপুর ২টার দিকে তার লাশের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে তাকে।

সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার আসর নামাজের আজানের কিছু সময় পরে হরিণাকুণ্ডু থানার এসআই জলিল এসআই জগদিশ, এএসআই রাম প্রসাদ এবং এএসআই নাসির তাহের হুদা গ্রামের নতুন বাজারে যান। সেখানে শহিদুলের চায়ের দোকানে গ্রামের লোকজন চা পানসহ গল্পে মত্ত ছিলেন।

পুলিশ শহিদুলের কাছে জিজ্ঞাসা করে মাহতাব কোথায়? প্রশ্নের উত্তরে চায়ের দোকানদার শহিদুল জানান এখানে নেই। পুলিশের প্রশ্ন শুনে মাহতাব দোকান থেকে সরে পড়ার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু চোখের আড়াল হতে পারেননি। পিছু নেয় পুলিশ। মাহাতাব দৌড়ে পুলিশের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর কী ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মাহতাবের ভাতিজা মোস্তাফিজুর রহমান নবাই অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে গ্রামের নতুন বাজারে একটি চায়ের দোকানে বসা ছিলেন তার চাচা মাহতাব। সেখানে ৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা এসে হাজির হন এবং মাহতাব কোথায় জানতে চান চায়ের দোকানদার শহিদুলের কাছে। এ সময় চায়ের দোকান থেকে মাহতাব পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশ তার পিছু নেয়। এরপর থেকে মাহতাবের মোবাইল ফোন বন্ধ পান পরিবারের সদস্যরা। ভোর ৬টার দিকে তারা জানতে পারেন নিজ বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে গ্রামের বেলের মাঠের একটি পান বরজে লাশ পাওয়া গেছে তার।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, তার চাচাকে হত্যা করা হয়েছে।

তাহেরহুদা গ্রামের নতুন বাজারের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহিদুলের দোকান থেকে সরে যাওয়ার সময় পুলিশ দেখে ফেলে মাহতাবকে। বেলের মাঠের দিকে দৌড়ে যান তিনি। তখন পিছু নেয় পুলিশ। একটু পরে পুলিশ ফিরে আসে। কিন্তু মাহতাবকে দেখেননি তারা। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় মাহতাব মারা গেছেন- এমন কথাও বলছেন কেউ কেউ।

চায়ের দোকানদার শহিদুল অভিযোগ করেন, ঘটনার কিছু সময় পরে পুলিশ ফের তার কাছে ফিরে আসে এবং মাহতাবকে দেখিয়ে না দেয়ার অপরাধে এএসআই নাসির তাকে লাথি ও চড়-থাপ্পড় মারে। একপর্যায়ে শহিদুলের নাম শুনে পুলিশ বলে তোকেই তো খুঁজছি। চল বলে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় উপস্থিত সরকারি দলের সমর্থকদের অনুরোধে পরে ছেড়ে দেয়া হয় তাকে। মাহতাবের অপর ভাতিজা প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রউফ বলেন, শহিদুলের দোকানে ৪ জন পুলিশ এসে মাহতাবকে খুঁজতে থাকে। এ সময় মাহতাব সেখান থেকে চলে যায়। কিছু সময় পরেই চাচার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

হরিণাকুণ্ডু থানার এএসআই নাসির মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের ডিউটি করার জন্য তাহেরহুদা বাজারের যান তারা। সঙ্গে ছিলেন একই থানার এসআই জলিল, এসআই জগদিশ ও এএসআই রাম প্রসাদ।

তিনি আরও জানান, ওই সময় বিএনপি নেতা মাহতাবকে খুঁজেছেন তারা। কিন্তু ধাওয়া করার কথা অস্বীকার করেন তিনি। তার দাবি, হার্ট অ্যাটাকে করে মারা গেছেন মাহতাব।

এ বিষয়ে হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পুলিশ মাহতাবকে ধরতে গেছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। কারণ মাহতাব বিএনপির স্থানীয় নেতা হলেও তার নামে কোনো অভিযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, চৌকিদারের মাধ্যমে খবর পেয়ে শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে গ্রামের একটি পানের বরজ থেকে মাহতাবের লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের ধাওয়া করার বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার না করে ওসি বলেন, গ্রামবাসীরা ঘটনাটি তাকে বলেছেন। কিন্তু কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।

ওসি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পরে জানতে পেরেছি নির্বাচনের ডিউটি করার সময় টহল পুলিশের ৪ কর্মকর্তা তাহেরহুদা গ্রামের নতুন বাজারে যায় এবং পুলিশ দেখে যারা পালিয়ে যায় তাদের মধ্যে মাহতাব ছিলেন। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস। এ সময় প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করার দাবি তুলেন এলাকাবাসী।