পৃথিবীতে যে দুইজনকে ভয় পান মাশরাফি
মাশরাফি বিন মতুর্জা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রাণ বলা হয় তাকে। গত ২৭ জুন একটি পত্রিকার মুখোমুখি হোন তিনি। তাতে মাশরাফি বলেন এই পৃথিবীর দুইজনকে ভয় পান তিনি। মানুষের এই ভালোবাসার কি কোনো ব্যাখ্যা আছে আপনার কাছে? একটা তো বুঝি, আপনার কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা একটু আলাদা।
আপনি যেমন সব সময় বলেন, ক্রিকেট খেলছেন বলে লোকে আপনাকে মাথায় তুলে রাখছে। যেখানে সমাজে এর চেয়ে বেশি অবদান রেখেও অনেকে এমন ভালোবাসা বা সম্মান পাচ্ছে না। কথাটা সত্যি, কিন্তু তারকাখ্যাতি অনেককেই এটা ভুলিয়ে দেয়। আপনার মধ্যে এই বোধটা কীভাবে থাকল?
সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনি বলতে পারেন, এর একটা কারণ ধর্মবিশ্বাস। প্রত্যেক মানুষ তার ধর্মকে বিশ্বাস করে। যেমন আমি প্রবলভাবে বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে যা কিছু হচ্ছে ওপরওয়ালার মাধ্যমেই হচ্ছে। এটা আমি সব সময় মানি। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে দুজনকে ভয় পাই—প্রথম আল্লাহ, দ্বিতীয় আমার মা। এই দুটো জিনিস পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। এর সঙ্গে আমি ভাগ্যে প্রচণ্ড বিশ্বাসী। দেখেন, শুধু পরিশ্রম
করলেই সব পাওয়া যায় না।
যদি আমি এভাবে চিন্তা করি, একজন রিকশাওয়ালা আমার চেয়ে বেশি খাটছে। আপনি তাকে কীভাবে বলবেন যে, তুমি পরিশ্রম করো, তোমার জীবন বদলে যাবে! ২০ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছে, সে আর কত পরিশ্রম করবে? সংসারে সচ্ছলতা নেই, শান্তি নেই। তার মানে কি সে ঠিকমতো খাটেনি? একজন রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে দেখেন, ভ্যানওয়ালার দিকে, একজন ড্রাইভারের দিকে…তারা কী না করছে! তারা ছেলেমেয়েদের যেভাবেই হোক, পড়ালেখা করাচ্ছে। আবার ওই ছেলে বড় হওয়ার পর হয়তো তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
এর কী ব্যাখ্যা? পরিশ্রম করলেই সাফল্য—এই কথা কি এখানে খাটে? অনেকে শচীন টেন্ডুলকারের উদাহরণ দেন—টেন্ডুলকার পরিশ্রম করেছে বলে এত সাফল্য পেয়েছে। তাহলে ওই রিকশাওয়ালা কী করছে? সে-ও তো পরিশ্রম করছে। অনেকে বলে, আল্লাহ তোমাকে দিয়েছে। হ্যাঁ, তোমার ‘ট্যালেন্ট’ ছিল, তুমি ভালো করেছ। আবার আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, যদি না খাটো, তাহলে তুমি কিছুই পাবে না। শুধু ‘ট্যালেন্ট’ থাকলেই হবে না। তার ঠিকমতো ব্যবহার করতে হবে।
আবার এটাও বিশ্বাস করি, অনেক খেলোয়াড়ই খুব পরিশ্রম করছে, কিন্তু হচ্ছে না। তার মানে কী, খাটলেই সবার হয় না। তবে তখন একটা সান্ত্বনা থাকে যে আমি আমার সেরাটা দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, তুমি যা পেয়েছ, যেখানে আছ, পরিশ্রম না করলে ওখান থেকে ওপরে যাওয়া সম্ভব নয়। হয়তো নিচে যাবে, কিন্তু ওপরে যাওয়া সম্ভব নয়।
আবার এটাও বিশ্বাস করি না যে, শচীন টেন্ডুলকার এত রান করেছেন, এটা শুধু ওঁর যোগ্যতাতেই করেছেন। আজকে আমি এত ভালোবাসা মানুষের পেয়েছি বা আমার এই যে ক্যারিয়ার, তা যেমনই হোক—আমি বিশ্বাস করি না যে, এর সবকিছু আমার দ্বারাই সম্ভব হয়েছে। হ্যাঁ, আমি চেষ্টা করেছি, আমার নিষ্ঠা-আন্তরিকতা ছিল, সবই ঠিক আছে। কিন্তু ওপরওয়ালার থেকে না আসলে এটা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
আল্লাহর পর মাকে সবচেয়ে ভয় পান বললেন। এটা একটু ব্যাখ্যা করবেন?
অপর প্রশ্নের উত্তরে মাশরাফি বলেন, এর মূল কারণও ধর্মবিশ্বাস। ছোটবেলা থেকেই একটা কথা বিশ্বাস করে এসেছি, এখনো বিশ্বাস করি, মা যদি কোনো কথা বলে, এর ওপরে কোনো কথা বলা যাবে না। আমার ধর্ম আমাকে এটাই বলে। আমি এটা মেনে চলি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন