পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সহিসংতার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা

দাবি অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি না করার প্রতিবাদে বাংলাদেশে আন্দোলনরত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সহিসংতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে দেশটি।বৈধ শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমকে অপরাধীকরণেরও নিন্দা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

বুধবার এক প্রেস বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, “বাংলাদেশে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সহিংসতার পাশাপাশি আইনসঙ্গত শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকাণ্ডকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার নিন্দা জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।”

তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা মজুরি বাড়ানোর দাবিতে গত কিছুদিন থেকে ঢাকা ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন করছেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সম্মতিতে মূল মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি চূড়ান্ত করা হয়। নতুন এ বেতন কাঠামো আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।।

তবে শ্রমিকরা ন্যূনতম এ মজুরির দাবি প্রত্যাখান করে বুধবার গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানা অধ্যুষিত এলাকায় বিক্ষোভে নামে। আশুলিয়ায় কড়া প্রহরায় শ্রমিকরা সড়কে নামতে না পারলেও গাজীপুরের কয়েক এলাকায় বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়। পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের এ সংর্ঘষের মধ্যে এক নারী নিহত হয়েছেন। আরও শ্রমিক ও পুলিশ আহত হয়েছে। পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে তিনজন পুলিশ আহত হয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এ বিবৃতি এল। বিবৃতিতে বলা হয়, গত সপ্তাহে ২৬ বছর বয়সী কারখানা শ্রমিক এবং সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য রাসেল হাওলাদার পুলিশের হাতে নিহত হওয়ার খবরে আমরা মর্মাহত। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঢাকার একটি কারখানার আগুনে ৩২ বছর বয়সী শ্রমিক ইমরান হোসেনের প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করছে। আমরা তাদের পরিবার এবং বৃহত্তর শ্রমিক সম্প্রদায়ের প্রতি সমবেদনা জানাই।

শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নের ওপর দমন-পীড়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নের চলমান দমন-পীড়ন নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। পাশাপাশি শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপরাধমূলক অভিযোগের তদন্ত করার জন্যও যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা তৈরি পোশাকের বেসরকারি খাতের সদস্যদের প্রশংসা করি, যারা যুক্তিসঙ্গত মজুরি বৃদ্ধির জন্য ইউনিয়নের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়াকে ন্যূনতম মজুরির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানায়, যাতে এটি শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপের সম্মুখীন না হওয়া নিশ্চিত করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করতে হবে যে, শ্রমিকরা সহিংসতা, প্রতিশোধ বা ভয়ভীতি ছাড়াই সংগঠনের স্বাধীনতা পাবে। যৌথ দর কষাকষির অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী এসব মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।