প্রতিদিনের যে বদভ্যাসগুলো আপনাকে সুস্থ হতে দেয় না!
শরীর ভালো রাখতে সব কিছুই করেন আপনি। খাবার খাওয়া, জিম বা ব্যায়াম, সাঁতার কিছুই বাদ দেন না।
তবুও আপনার শরীর কিছুতেই ভালো থাকে না। এর মূল কারণ কি জানেন? আসলে আপনার কিছু বদভ্যাস আপনাকে সুস্থ হতে দেয় না। কী রকম সেই বদভ্যাসগুলি?
১. ভালো করে হাত না ধোয়ার অভ্যাস
সারা দিনে কতবার হাত ধোয়ার অভ্যাস আছে আপনার? এই যে সারা দিন ল্যাপটপ, মোবাইল, টিভির রিমোট নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন, তাতে কী হচ্ছে জানেন? আমাদের ঘর যতই পরিষ্কার থাকুক না কেন, এমন কিছু জীবাণু আমাদের চারপাশে সবসময় থাকে, যা আমরা খালি চোখে দেখতে পারি না। এ ছাড়াও আমাদের চামড়ায় প্রচুর পরিমাণে জীবাণু থাকে। সেগুলি ল্যাপটপ, মোবাইল এবং রিমোটে জমতে থাকে। তারপর হাত হয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে নিজেদের খেল দেখাতে শুরু করে। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ি আমরা। এমনটা হওয়া থেকে আটকাতে পারে হাত ধোয়ার অভ্যাস, যা আমাদের অনেকেরই নেই। হাত ঠিকমতো না ধোয়ার কারণে ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি, গলা বসে যাওয়া, চোখ লাল হয়ে ওঠা, খাবার থেকে বিষক্রিয়া এবং ডায়রিয়ার মতো রোগগুলি হয়।
তাই খেতে বসার আগে হোক বা গোসল করার সময় ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে ভুলবেন না। এ ক্ষেত্রে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ ইত্যাদি ব্যবহার করুন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন যে, যত বেশিক্ষণ এবং বেশি দিন আপনি হাত না ধুয়ে থাকবেন, ততই ব্যাকটেরিয়া বেশি পরিমাণে আবাস তৈরি করতে পারবে।
২. অনেক রাত অবধি জেগে থাকা
অনেক রাত অবধি জেগে থাকার অভ্যাস আছে নাকি? তাহলে কিন্তু নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছেন। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের তরফে জানানো হচ্ছে যে, যারা বেশি রাত অবধি জেগে থাকেন, তাদের শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ কমতে থাকে। এমনকি এদের মধ্যে দুশ্চিন্তার প্রকোপও বেশি দেখা যায়। গবেষণায় বলা হচ্ছে যে, ঘুমের সামান্য পরিমাণে ঘাটতিও শরীরে নানারকম রোগের জন্ম দেয়। তাই সাবধান!
৩. দাঁত দিয়ে নখ কাটা
অনেকেই আছেন, যারা দাঁত দিয়ে নখ কাটেন। এমনটা করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ আমাদের সব কাজই হাত দিয়ে করতে হয়, তাই নখের মধ্যে নানা ক্ষতিকারক উপাদান জমে থাকে। আর যখন দাঁত দিয়ে নখ কাটা হয়, তখন এই ক্ষতিকারক উপাদান আমাদের পেটের ভেতর প্রবেশ করে। ফলে পেটের রোগ, বমি, ডাইরিয়া, ই-কোলাই প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। প্রসঙ্গত, গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যারা দাঁত দিয়ে নখ কাটেন, তাদের এই সমস্ত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৭৬% হারে বৃদ্ধি পায়।
৪. ডেস্কে বসেই খাবার খাওয়া
কাজের চাপে বাইরে গিয়ে খাবার খাওয়ার সময় নেই? ডেস্কে বসেই তাই খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন? তাহলে তো আপনি রোগে আক্রান্ত হবেনই। কারণ গবেষণায় জানা যাচ্ছে যে, অফিসে সবথেকে বেশি জীবাণু থাকে কফিপট এবং কি- বোর্ডে। কারণ এই জিনিসগুলি অনেক লোক একসঙ্গে ব্যবহার করেন। অন্যদিকে সবার হাতেই কিছু না কিছু নোংরা লেগে থাকে। ফলে সেগুলি ব্যবহার করা বা সেগুলির পাশে বসে খাওয়াও শরীরের জন্য খারাপ। অন্যদিকে ডেস্কে বসে খেলে খাবারের অল্প পরিমাণ টুকরো হলেও ডেস্কে পড়ে। ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাধে এবং রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
৫. বাড়িতে জুতা পরে থাকা
ঘরের ভেতর বাইরের জুতা পরে ঢুকে যান না তো? এমনটা করলে কিন্তু খুব বিপদ। কারণ আপনি জানেন না, রাস্তায় কি ধরনের বিষাক্ত এবং নোংরা পদার্থ পড়ে থাকে। ফলে সেইসব নোংরা এবং বিষাক্ত পদার্থ জুতার নিচে লেগে যায়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ক্লসট্রিডিয়াম ডিফিসিল নামক এক ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া প্রায় সব জুতার নিচে পাওয়া যায়, যা পেটের রোগ, কৃমি, বমি, ডাইরিয়া ইত্যাদির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৬. বাথরুমে ফোন নিয়ে ঢোকা
বাথরুম আমরা ব্যবহার করি শরীরের ক্ষতিকারক এবং অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য বের করার জন্য। ঠিক এই কারণেই বাথরুমে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে। ফলে রোগভোগের আতুর ঘরের মতো কাজ করে বাথরুম। তাই সুস্থ থাকতে হলে বাথরুমে ফোন নিয়ে কখনোই যাওয়া চলবে না।
৭. দীর্ঘদিন বিছানার চাদর না বদলানো
বিছানার চাদর কতদিন অন্তর পাল্টান? এক মাস, দুই মাস কেটে যায়? জানেন কি এই বদভ্যাসের কারণে কী মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে আপনার শরীরের? আসলে বিছানার চাদর এবং তার নিচে এক ধরনের আণুবীক্ষণিক ব্যাকটেরিয়া বাসা বাধে। যা আমাদের পেটের রোগ, ইকোলাইসহ শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জির মতো নানা রোগে আক্রান্ত করে তোলে। তাই সুস্থ থাকতে প্রতি সপ্তাহে বিছানার চাদর বদলানো উচিত।
সূত্র: বোল্ডস্কাই
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন