প্রতিশোধ নিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে ‘ছেলেধরা’ আতঙ্কের
বাংলাদেশে ছেলেধরা গুজবকে কেন্দ্র করে যখন গণপিটুনির বেশ কিছু ঘটনা ঘটছে, তখন অনেকে এই বিষয়টিকে প্রতিশোধ নিতে কিংবা পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ব্যবহার করতে শুরু করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি এ ধরণের বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একজনকে গণপিটুনি দেয়া হয়। অভিযোগ তোলা হয়েছে যে বকেয়া ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে আসলে ভাড়াটিয়াকে গণপিটুনি দিয়েছে বাড়িওয়ালা।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামও নিশ্চিত করেছেন যে এটি ছিল বকেয়া বাড়ি ভাড়া নিয়ে কলহের ফসল।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “এক ভাড়াটিয়া, যিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন, তিনি ভাড়া দিতে না পারায় তার বাসা ভাড়া বকেয়া পড়ে যায়। পরে বাড়িওয়ালা ওই ভাড়াটিয়াকে ছেলেধরা বলে গণপিটুনি দেয়।”
তিনি জানান, ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার করে ওই ভাড়াটিয়াকে।
এ ঘটনায় ভাড়াটিয়া মামলা করলে গ্রেফতার করা হয় বাড়িওয়ালাকে। পরে তাকে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে, মঙ্গলবার গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে ছেলেধরা অভিযোগে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন দু’জন, যারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিয়াকত আলী জানান, পুলিশ খবর পায় যে নয়নপুর বাজার এলাকায় গণপিটুনি দেয়া হচ্ছে দুই জনকে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়।
পরে পুলিশ জানতে পারে যে স্বামীর একাধিক বিয়ে নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে বাক-বিতণ্ডায় জড়ায় ওই স্বামী-স্ত্রী। এক পর্যায়ে তারা একে অপরকে ছেলেধরা বলে চিৎকার করতে শুরু করলে স্থানীয়রা তাদের গণপিটুনি দেয়।
আসলে তারা কেউই ছেলেধরা ছিল না বলে পুলিশ।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আটক করা হয়েছে একজনকে।
আরেকটি ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নে। সেখানে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন কয়েকজন ছাগল ব্যবসায়ী।
তাদের অভিযোগ, আগে যাননি এমন একটি গ্রামে গিয়ে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তারা। ওই সময় ছিনতাইকারীরা তাদেরকে ছেলেধরা বলে মারধর শুরু করে এবং পরে কৌশলে পালিয়ে যায়।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম বিবিসি বাংলাকে জানান, স্থানীয় বাজারের লোকজনের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজন ছাগল ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেন তিনি। পরে তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
তবে সেখানে কোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গণপিটুনি রোধে জনসচেতনতা তৈরিতে তারা নানা ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে। কোন ব্যক্তি যাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়, তারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে কাউকে সন্দেহ হলে জরুরী হটলাইন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে জাতীয় জরুরী সেবা বিভাগের পুলিশ সুপার মোঃ তবারক উল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, গণপিটুনি সম্পর্কে গত কয়েক দিন ধরে বেশি পরিমাণে টেলিফোন পাচ্ছেন তারা।
তিনি বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে দিনে আমরা অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি করে গণপিটুনির অভিযোগ সংক্রান্ত ফোন পাচ্ছি। তবে যখনই সত্যতা যাচাই করতে যাই, তখন সেখানে গিয়ে তেমন কিছু পাওয়া যায় না।”
“যে কল করে তার কাছে জিজ্ঞেস করলেও সে আসলে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারে না। বেশিরভাগ সময়েই বলে যে সে অন্য কারো কাছ থেকে শুনে ফোন করেছে।”
পুলিশ সুপার মিস্টার তবারক উল্লাহ বলেন, “আমাদের কাছে মনে হয় এর পিছনে কোন একটা স্বার্থ হাসিলকারী গ্রুপ কাজ করে, না হলে কেন এই বিষয়টি এভাবে আসবে?”
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন