প্রথমে রড-হকিস্টিকে মারধর পরে পিকআপ চাপায় মৃত্যু
রাজধানীর ধানমন্ডিতে চলছে একাদশ সংসদ নির্বাচনী ডামাডোল। নির্বাচনী আমেজে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম কিনতে ব্যস্ত। সে লক্ষ্যে চলছে শোডাউন, নেতাকর্মীদের মহড়া। এমনই অবস্থার মধ্যে খোদ রাজধানীতেই দুই সংসদ সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনার মধ্যে পিকআপ ভ্যান চাপায় দুই সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। হামলায় ২ নিহতের নেপথ্যের কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন আদাবর নবোদয় হাউজিং লোহার গেট এলাকায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত দুজন ও আহতরা সবাই সাদেক খানের সমর্থক বলে জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এটাই প্রথম নির্বাচনী সহিংসতার বড় প্রাণহানির ঘটনা।
ওই ঘটনায় আদাবর থানা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক পলাশ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মুশফিক, সবুজ, মাসুদ, নজরুল ইসলাম, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলু, আনোয়ার হোসেন, ইদ্রিস, হালিমসহ ১২/১৪ জন আহত হয়।
আহত মুশফিক ও পলাশ জানান, প্রথমে ইট পাথর নিক্ষেপ করে ভীতি ছড়ানো হয়। এরপর রড, হকিস্টিক ও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। ভীতি ও আতঙ্কে অনেকে পিকআপভ্যান থেকে নেমে দৌড় দেয়। ওই সময় পিকআপ ভ্যানটি পেছনে ব্যাক করতে গিয়ে উঠে পড়ে আরিফ হোসেন ও মো. সুজনের ওপর। আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেবার পর মারা যান ওই দুজন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বক্তব্যে দুই প্রার্থীর শোডাউন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনার মধ্যে পিকআপভ্যান চাপায় দুইজনের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়টি উঠে আসলেও পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে ভিন্ন তথ্য মেলে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের এডিসি ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ‘শুনেছি আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের মিছিল ছিল। তবে তা স্পষ্ট নয়। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে বা কর্মসূচির কারণে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। যে কারণেই ঘটনার সূত্রপাত হোক না কেন, তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
সংঘর্ষের বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ‘যে দুজন মারা গেছেন তারা আমার দল আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী। যারা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করল আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
কারা হামলা করেছে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির নানকের নাম মুখে না নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তো আর কারও নাম ধরে বলতে পারি না কার লোক মেরেছে। তবে ওই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে ১২/১৪ জন। তারা সবাই বলেছে, যুবলীগের তুহিনের নেতৃত্বে আমার সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। আর তুহিন কার লোক সেটা সবাই জানে।’
এ ব্যাপারে জানতে জাহাঙ্গীর কবির নানকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে ম্যাসেজ পাঠিয়েও তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আদাবর ৩০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আদাবর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম তুহিনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। আর তিনি নানক (জাহাঙ্গীর কবির নানক) ভাইয়ের অনুসারী।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সাদেক খানের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার জন্য তার কর্মী-সমর্থকদের একটি গাড়িবহর মিছিল নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ের সামনে যায়। এ সময় নানকের সমর্থকেরা বাধা দেন। তখন দুইপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর আরও বেশ কটি স্থানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে নবোদয় হাউজিং লোহার গেটে পিকআপের নিচে চাপা পড়েন আরিফ হোসেন ও মো. সুজন।
নিহত আরিফ ও সুজনের বন্ধু নুরুল আমিন জানান, সকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি প্রোগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল। এজন্য তারা ১০–১২ জন বন্ধু মিলে নবোদয় হাউজিং লোহার গেট এলাকায় অবস্থান নেন। সেখানে মিছিল করে একটি পিকআপ ভ্যানে ওঠেন তারা। এর পরপরই কয়েকজন পিকআপটিতে ইটপাথর ছুড়তে থাকে। তাড়াহুড়ো করে সবাই নামতে শুরু করে। চালক পিকআপভ্যানটি পেছনে চালাতে থাকলে কয়েকজন পড়ে যায়। পিকআপটি সুজন ও আরেক কিশোরের ওপর দিয়ে উঠে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আরিফ মারা যায়। গুরুতর অবস্থায় সুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সুজনের মৃত্যু হয়।
নুরুল আমিন আরও জানান, নিহত সুজন নবীনগর হাউজিংয়ের ১০ নম্বর রোডে থাকে। পেশায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে সে। তার বাবার নাম রুহুল আমিন।
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, আরিফ প্রিন্টিংয়ের কাজ করে। তার বাবার নাম মো. ফারুক হোসেন। ভোলা জেলার লালমোহনে গ্রামের বাড়ি। ঢাকার তুরাগ হাউজিংয়ের ঢাকা উদ্যান পানির পাম্পের পাশে তার বাসা।
এ ঘটনায় ১২/১৪ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আরও কয়েক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাদের সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলেও যান।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলের আশপাশের ক্লোজসার্কিট টিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন