প্রথম তদন্তে আমি নির্দোষ ছিলাম : খালেদা
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় প্রথমবার তদন্তে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মেলেনি বলে আদালতে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দাবি, তার সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত এক কর্মকর্তাকে দিয়ে দ্বিতীয়বার তদন্ত করানো হয় এবং তিনি নিজের ক্ষোভ থেকে তার বিরুদ্ধে এই প্রতিবেদন দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ আখতারুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হন বিএনপি নেত্রী। বেলা সাড়ে ১১টায় খালেদা জিয়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অসমাপ্ত বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আজ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের অসমাপ্ত বক্তব্য দেয়া এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য ছিল। এ নিয়ে সপ্তম দিনের মতো তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা প্রয়োগ করে ইয়াতিমের টাকা আত্মস্যাৎ করেননি দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কোনো দুর্নীতি করেননি দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা নূর আহমেদ আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ না পেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেননি। কিন্তু মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।’
২০০৫ সালে বিএনপি জোট সরকারের সময়ে চাকরিচ্যুত হওয়ার কারণে হারুন-অর-রশিদ ক্ষিপ্ত ছিলেন বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করেন খালেদা। বলেন, ‘তারই ফলশ্রুতিতে তাকে (হারুন-অর-রশিদ) আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হচ্ছে।’
হারুন অর রশিদকে অব্যাহতি দেয়ার কারণও জানান খালেদা জিয়া। বলেন, ‘তদন্ত কর্তা হারুন অর রশিদ ২০০৫ সালে আমাদের সরকারের সময় অযোগ্য প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এই মামলায় দুই জন ব্যক্তি দুটি তদন্ত করেছে। কিন্ত তদন্তের ভাষা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় দুটির ভাষা এক। তাতে প্রমাণ হয় সাজানো তদন্ত করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বাদী সরকারের আজ্ঞাবহ। আদালতে দেয়া জবানবন্দি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দলীয় ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এটা করা হয়েছে।’
বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই, অথচ সাক্ষী মামলার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছেন।’
এই মামলার তদন্ত নিরপেক্ষ হয়নি দাবি করে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের সাথে আমার কোন ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই। অথচ এজাহারে আমার নামটি তুলে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের নামে সোনালী ব্যাংক বা প্রাইম ব্যাংকের একাউন্টে আমার কোন স্বাক্ষর নেই, কোন চেকেও আমার স্বাক্ষর নেই। কোন দালিলি সাক্ষ্য কেউ উপস্থাপন করেনি।’
এদিকে আদালতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে খালেদা জিয়া লম্বা বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি লিখিত বক্তব্য জমা দিতে পারেন।
পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার স্থায়ী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আর এই আবেদন নাকচ করে ৩০ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট মামলার শুনানির দিন নির্ধারণ করেন বিচারক।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন