প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি : শাস্তির সুপারিশের পরও অব্যাহতি
তিন সংস্থার শাস্তির সুপারিশ সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনায় এজfহারভুক্ত ১১ আসামিকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। আসামিদের বিরুদ্ধে নাশকতা, আত্মঘাতী ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে সিটিটিসি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে।
তবে এজাহারনামীয় আসামি সিদ্দিকুর রহমান, নাজমুল হক ও শাহ আলম তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে প্রধানমন্ত্রীর বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতো না। ৬ ডিসেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসির সহকারী পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
অপরদিকে, বিমানে ত্রুটি হওয়ার পর বিমান বাংলাদেশ, সিভিল এভিয়েশন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আসামিদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেন।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ্য করেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে নিয়োজিত উড়োজাহাজটির ওয়েল প্রেসার সেনসার পরিবর্তনের কাজটি করেন সিদ্দিকুর রহমান এবং সহযোগিতা করেন মেকানিক শাহ আলম। ওই সময় ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল হক পরীক্ষার (Leak check) জন্য তিনবার ভেতরে (Cowl) প্রবেশ করেন। তবে তিনি তদন্ত কমিটির কাছে একবার ভেতরে যাওয়ার কথা স্বীকার করে আর দুইবার অস্বীকার করেন। ফলে নাজমুল হকের আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়। তবে তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণ এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় তদন্ত কমিটিগুলোর প্রতিবেদনের আলোকে মামলার ঘটনায় নাশকতা, আত্মঘাতী ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উড়োজাহাজ একটি আকাশ পথের পরিবহন, যাতে শত শত লোক দেশ-বিদেশে গমন করে থাকেন। এমন একটি পরিবহনের রক্ষাণাবেক্ষণের কাজ করায় আরও মনোযোগী হওয়া উচিত। উড়োজাহাজটি রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিতদের অধিক মনোযোগী ও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। কারণ প্রধানমন্ত্রীর প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটলে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তো।
মামলার সার্বিক তদন্তে এজাহারনামীয় আসামিদের বিরুদ্ধে নাশকতা, আত্মঘাতী ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাই মামলার দায় থেকে তাদের অব্যাহতি প্রার্থনা করছি।
আসামি সিদ্দিকুর রহমান, নাজমুল হক ও শাহ আলমের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ২৮৭ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলার অনুমতি প্রার্থনা করছি।
যাদের অব্যাহতির প্রদানের আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- বিমানের প্রধান প্রকৌশলী (প্রডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স) এসএ সিদ্দিক, প্রধান প্রকৌশলী (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সিস্টেম কন্ট্রোল) বিল্লাল হোসেন, প্রকৌশল কর্মকর্তা এসএম রোকনুজ্জামান, সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসাইন ও টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমান।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে জরুরি অবতরণ করে। ত্রুটি মেরামত করে সেখানে চার ঘণ্টা অনির্ধারিত যাত্রাবিরতির পর ওই উড়োজাহাজেই প্রধানমন্ত্রী বুদাপেস্টে পৌঁছান।
এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। এর আগে ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর ১৪ ডিসেম্বর বরখাস্ত হন বিমানের তিন প্রকৌশলীও।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ বিমানের প্রধান প্রকৌশলীসহ ৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়। বাংলাদেশ বিমানের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়েল ম্যানেজমেন্ট) উইং কমান্ডার (অব.) এমএম আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন