‘প্রধানমন্ত্রী আ.লীগের দরজা খুলে দিলে বিএনপি শূন্য হয়ে যাবে’

প্রধানমন্ত্রী যদি আওয়ামী লীগের দরজা খুলে দেন, তাহলে বিএনপির ঘর শুন্য হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইশারা দিলেই মির্জা ফখরুল ডানে, বামে, পেছনে আর কাউকে পাবেন না।

সোমবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর বিএমএ অডিটরিয়ামে বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন আয়োজিত শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি একটি রাজনৈতিক লাশে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে নৌ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এখন বিএনপি আছে লাশের রাজনীতি নিয়ে। তারা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চান না যে, দলের মধ্যে কোনো অনুপ্রবেশ ঘটুক। তিনি কারো রাজনৈতিক চরিত্র হনন করতে চান না। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের দরজা খোলা আছে, বিএনপির ঘর শূন্য হয়ে যাবে। মির্জা ফখরুলরা জানে না; তিনি ডানে, বামে, পেছনে কাউকেই পাবেন না। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইশারা দেন। কারণ আদর্শহীন, নীতিহীন একটি রাজনৈতিক দল জিয়াউর রহমান গঠন করেছিলেন খুনিদেরকে নিয়ে, অপরাধীদেরকে নিয়ে। বাংলার মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে, তারা খুনি অপরাধীদের সঙ্গে নাই। দেশের মানুষ সত্য এবং সুন্দরের সঙ্গে আছে। সত্য এবং সুন্দর হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধু।

পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিয়ে জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন অপপ্রচার তুলে ধরে খালিদ মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড। পৃথিবীর অনেক রাজনৈতিক নেতা নিহত হলেও সপরিবারে এভাবে নারী, পুরুষ, গর্ভবতী নারী, শিশু এতো মানুষ এভাবে হত্যা করা হয় নাই কোথাও। এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ছিল জিয়াউর রহমান। একটি হত্যাকাণ্ড কীভাবে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল, আমরা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর দেখেছি।

তিনি বলেন, একটি হত্যাকাণ্ডকে জায়েয করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জিয়াউর রহমান কীভাবে অপপ্রচার চালিয়েছে! কীভাবে কলুষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কীভাবে নোংরা কল্পকাহিনী সাজিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে খাটো করার চেষ্টা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যার মুখে প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল জয়বাংলা স্লোগান। তিনি ইন্দিরা গান্ধীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে, নিরাপদ জীবন ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আরেক সন্তান শেখ জামাল পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তারা ইচ্ছা করলেও নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারতেন। ৫০ বছরের বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আমরা একজন এরকম ক্রীড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক কর্মী, মেধাবী ছাত্রনেতা শেখ কামালকে দেখতে পাই না। তাকে কীভাবে কল্পকাহিনী বানিয়ে তার চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু একটি অপরাধকে, একটি হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করার জন্য জিয়াউর রহমান এই কল্পকাহিনী বানিয়েছিলেন। তার ধারাবাহিকতা এরশাদ ও খালেদা জিয়া একইভাবে পালন করেছেন। আজকের বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের বন্ধু নয়; বঙ্গবন্ধু বিশ্বের বন্ধু।

নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুকে লালন করি বলেই আজকে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা বার বার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে তাই সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের সমালোচনা করা হয়; ১৩৯টি আইন অধ্যাদেশ দিয়ে কীভাবে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে, প্রতিটি বিষয়ে ফাউন্ডেশন (ভিত্তি) বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেছেন। এই কথাগুলো বলা হয় না।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার মাত্র এক বছরের মাথায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে কীভাবে গোলযোগ করা হয়েছে। সর্বহারার নামে বিদেশি বেনিয়াদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া হয়েছে। সাড়ে তিন বছরের একটি নতুন দেশকে অরাজকতা তৈরি করে ব্যর্থ করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তারপরও এই দেশটিকে দরিদ্রপীড়িত দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশে নিয়ে গেছেন। স্বাধীনতাবিরোধীরা যখন ব্যর্থ হয়ে গেছে, তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে।

নৌ পর্যটনে বিআইডব্লিউটিসি’র সম্পৃক্ততা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা দুটি ক্রুজ ভেসেলের চুক্তিপত্র করেছি। এ দুটি ভেসেলে সব আন্তর্জাতিক সুবিধা থাকবে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যেই এ জাহাজ দুটি পেয়ে গেলে বিদেশি পর্যটকরাও এখানে আগ্রহ দেখাবে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের কথা চিন্তা করেই বিআইডব্লিউটিসিকে এগিয়ে যেতে হবে।

বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (সিবিএ) সভাপতি ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি মো. মহসিন ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান, কার্যকরী সভাপতি মো. আলাউদ্দিন মিয়া, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, সাহাবুদ্দিন মিয়া, মো. মশিকুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খান সিরাজুল ইসলাম এবং বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুন্সী জুলহাস রহমান।

অনুষ্ঠানে জাতির পিতাসহ ১৫ আগস্টের শহিদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করা হয়।