প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছেন সর্বকালের সর্ববৃহৎ সংবর্ধনা

স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে জাতিসংঘের তালিকায় বাংলাদেশের প্রবেশের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে ২২ মার্চ। ওইদিন আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বীকৃতির জন্য আবেদন জানাবে বাংলাদেশ। এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণের বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বড় ধরনের সংবর্ধনা দেবে সরকার।

এদিন রাজধানীতে বের করা হবে আনন্দ শোভাযাত্রা। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আনন্দ শোভাযাত্রার পাশাপাশি একটি সেবা সপ্তাহ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সংবর্ধনার মূল অনুষ্ঠান হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এই সংবর্ধনা ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়।

প্রতিবেদকের কথা হয় এই আয়োজনের মনিটরিংয়ের মূল দায়িত্বে থাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের (ইআরডি) উপ-সচিব আনোয়ার হোসাইনের।

তিনি বলেন, ‘এটা হবে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এ যাবৎকালে সর্ববৃহৎ সংবর্ধনা।’

আনোয়ার হোসাইন বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা উপলক্ষে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। ওইদিন সারাদেশে এ কর্মসূচি পালিত হবে।

তিনি জানান, সন্ধ্যায় বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পরদিনও থাকবে নানা আয়োজন। কারণ, এলডিসি থেকে বের হতে পারা বাংলাদেশের অনেক বড় স্বপ্নও ছিল।

বিদেশি উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যক্তিবর্গ এ আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই উপ-সচিব বলেন, তা থাকবে। যেহেতু বিষয়টি জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পৃক্ত, ফলে তাদের পক্ষ থেকে বেশকিছু অতিথি থাকবে।

জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মাহফুজার রহমান বলেন, শোভযাত্রা করা ছাড়াও ইআরডির পক্ষ থেকে যে ধরনের নির্দেশনা আসে তা পালনে আমরা যথাযথ ভূমিকা পালন করব।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে ওই দিন শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে এবং কিভাবে এটা উদযাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, সেদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জনসাধারণ সম্পর্কিত বেশ কিছু সেবা প্রদান করবে। তবে কি ধরনের সেবা প্রদান করা হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি।

এর আগে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর এ সংবর্ধনা বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সব শর্ত পূরণ হওয়ায় বিশ্ব ইকোনমিক ও সোশ্যাল কাউন্সিল মার্চ মাসে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করবে।

তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য বড় আয়োজন। ফলে এ স্বপ্ন যিনি সামনে থেকে অর্জন করেছেন তার (প্রধানমন্ত্রী) সংবর্ধনা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর এ সংবর্ধনা উপলক্ষে তাদেরও থাকবে বড় আয়োজন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নজমুল ইসলাম বলেন, এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়া আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন।

তিনি বলেন, এ অর্জনকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে সারাদেশে নিয়োজিত কৃষি মন্ত্রণালয়ের সব জনবল এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হবে। আমরা মনে করি সেদিনটি হবে উৎসবমুখর।

জানতে চাইলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুবা পান্না বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণাসহ সব ধরনের কার্যক্রম আমরা করব। বেসরকারি চ্যানেলগুলো বা প্রাইভেট যে কোনো গণমাধ্যম যেকোনো ধরনের তথ্য-উপাত্ত চাইলে আমরা তাদেরকে সেটা দিয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা সরকারি গণমাধ্যমের পাশাপাশি বেসরকারি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের উদ্যোগ নিচ্ছি যাতে করে এই ধরনের উদ্যোগ দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এ উপলক্ষে আমরা একাধিকবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি।

প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা উপলক্ষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়েও ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। এ উপলক্ষে তারা প্রতিটি দফতর ও কর্মরত কর্মকর্তাদের চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. হায়দার আলি বলেন, আমরা ওই দিন মন্ত্রণালয়ের জনবল নিয়ে আমাদের মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাসহ বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করব।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এ সংবর্ধনা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তার বড় প্রমাণ হলো আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণ হয়েছি। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এর আগে ৭ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে যে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়, তা বাংলাদেশ প্রায় অর্জন করেছে।

প্রথমত, মাথাপিছু আয় এক হাজার ২৪২ মার্কিন ডলার হতে হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এক হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। দ্বিতীয়ত, মানবসম্পদের উন্নয়ন অর্থাৎ দেশের ৬৬ ভাগ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতে হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের ৭০ ভাগ মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয়েছে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর না হওয়ার মাত্রা ৩০ ভাগ হতে হবে, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে তা ২৬ ভাগ অর্জন করেছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের ইকোনমিক ও সোশ্যাল কাউন্সিল উল্লিখিত তিনটি বিষয় বিবেচনা করে কোনো দেশকে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবার ঘোষণা দেয়। মার্চ মাসে এ কাউন্সিলের মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণার বিষয়টি আলোচিত হবে।সৌজন্যে : পরিবর্তন ডটকম