প্রধান বিচারপতি পাকিস্তানিদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন : তথ্যমন্ত্রী
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা পাকিস্তানিদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
সোমবার বিকেলে রাজধানীতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) আয়োজিত আলোচনা সভায় দলটির সভাপতি ইনু এ মন্তব্য করেন।
ইনু বলেন, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির বিরোধিতা করলেও জাসদ কখনোই সামরিক সরকারের সঙ্গে আপস করেনি। তিনি আরো বলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি বঙ্গবন্ধু এবং যুদ্ধ সম্পর্কে কটাক্ষের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানিদের পাতা ফাঁদে পা দিলেন।’
গত ১ আগস্ট বিচারপতিদের অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ সাত বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ৭৯৯ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।
এর আগে গত ৩ জুলাই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
এ মামলায় নয়জন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তাঁরা হলেন ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, বিচারপতি টি এইচ খান, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল ও এজে মোহাম্মদ আলী।
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ষোড়শ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র। রায়ে আরো বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে।
আদালত রায়ে আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সাংসদরা ভোট দিতে পারেন না। তাঁরা দলের হাইকমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার ফলে সাংসদদের সব সময় দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তাঁরা দলের বাইরে যেতে পারেন না। যদিও বিভিন্ন উন্নত দেশে সাংসদদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা আছে।
রায়ে বলা হয়, মানুষের ধারণা হলো, বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে। সে ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়, যেটি ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন