প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে পোস্টারিংয়ে ছেয়ে গেছে ময়মনসিংহ গৌরীপুর পৌর শহরে

ময়মনসিংহের গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলামের পদত্যাগের দাবীতে পোস্টারিংয়ে ছেয়ে গেছে গৌরীপুর পৌর শহর। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) টানা ২০ দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঝুলছে আন্দোলনকারীদের তালা।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের পদত্যাগের দাবীতে পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায় করা হয়েছে পোস্টারিং।

গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ ও অপসারণের দাবীতে শহরে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গৌরীপুরে ৩জন নিহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় মাওহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলামকে আসামী করা হয়েছে।

এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করতে ৪ আগস্ট গৌরীপুরে বোমা হামলা-ভাংচুর ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায়ও এ প্রধান শিক্ষককে আসামী করা হয়েছে। এছাড়াও এ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক সরকার, ম্যানেজিং কমিটি ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্টেশন রোডস্থ সুভাষ সরকারের স্ত্রী নুকুল রানী ভট্টাচার্য্য, খেলার মাঠের ফয়েজ উদ্দিনের পুত্র নুরুল আমিন, বাড়িওয়ালাপাড়ার মতিলাল সরকারের পুত্র কাজল কুমার সরকারকেও আসামী করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ নিয়োগ বৈধ করতে ৫ আগস্ট দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশেও ফাঁকা রেজুলেশনে স্বাক্ষর দিয়ে এ নিয়োগ বৈধতা দিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বৈধ করতে বিদ্যালয়ের তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই একটি ফাঁকা ওয়েব সাইট করেন এ প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. হাবিবুর রহমান। ওই ওয়েবসাইটে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠের কোনো তথ্য আপলোড করেন নাই। শুধুমাত্র ‘একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।’ তবে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরবর্তীতে নিয়োগ পরীক্ষা ও ফলাফল সংক্রান্ত কোনো তথ্য ওয়েবসাইটে ও নোটিশ বোর্ডে প্রদান করা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. হাবিবুর রহমান জানান, নিয়োগ নিয়ে চাপে ছিলাম, কমিটিও দ্রুত নিয়োগ দেয়ার জন্য বলছিলো। তাই ২ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান পরিস্থিতিতেও নিয়োগ পরীক্ষা নিতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ওয়েবসাইট ছাড়া নিয়োগ নেয়া সম্ভব না। তাই তাড়াহুড়া অবস্থায় করা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পর পরীক্ষার তারিখ, লিখিত পরীক্ষার বা চুড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত ফলাফল বোর্ডে ও ওয়েবসাইটে দিতে হবে, সেটা আমার জানা ছিলো না।

আন্দোলনকারীরা বলেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ‘লাখ টাকায় বিদ্যালয়ের ফাঁকা (তথ্য উপাত্তবিহীন) ওয়েব সাইট বানিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ৩০লাখসহ ৩টি নিয়োগে অর্ধকোটি টাকা লুটে নিয়ে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য করেছে।

তাঁরা আরও বলেন, দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শ’শ শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছেন, সেই সময়ে মেধার স্থলে টাকার বিনিময়ে এখানে নিয়োগ হয়েছে, এ নিয়োগ বাতিল করতে হবে। ৫ আগস্ট দেশে যখন সকল কার্যক্রম বন্ধ, সেইদিনে ভুয়া রেজুলেশান করে অবৈধ নিয়োগের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই এ নিয়োগ বাতিল করতে হবে।