প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানোর এখনই সঠিক সময়
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম প্রেসিডেন্সির স্পেশাল এনভয় আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, স্বাধীনতার পরপরই বিপুল সংখ্যক দক্ষ জনশক্তি দেশ থেকে বাইরে চলে গেছে। এটাকে ব্রেন ড্রেন বলা যায়। কিন্তু এখন সময় এসেছে ব্রেন গেইন করার। বিশ্বের উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তাই বিভিন্ন দেশে আমাদের যে দক্ষ জনশক্তি, যাদের আমরা এনআরবি বলছি তাদের কাজে লাগাতে হবে।
এনার্জি এন্ড পাওয়ার আয়েজিত ‘এনআরবি’স এন্ড লোকাল টেকনিক্যাল রিসোর্স ইনট্রিগ্রেশন ফর ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে এমটুকে ইপি টকস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপরের কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, এর আগে গ্লোবাল ইকোনমির ধস আমাদের তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। কিন্তু গত দশ বছরে অবস্থা অনেক পাল্টে গেছে। এখন যে কোনো গ্লোবাল ইস্যুর ইমপ্যাক্ট আমাদের উপরেও পড়বে।
ইপি টকসে প্যানেলিস্ট হিসাবে বক্তব্য রাখেন সাবেক বিদ্যুৎ সচিব পরিবেশ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. সুলতান আহমেদ, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও এনার্জিপ্যাকের সিইও হুমায়ুন রশীদ, অপারেশনাল একসিলেন্স বিশেষজ্ঞ ও আমেরিকা প্রবাসী শিক্ষাবিদ ড. হাবিব সিদ্দিকী, নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের অনারারী কনসাল ইঞ্জি শফিকুর রহমান ভূইয়া অনু, সামিট টেকনোপলিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা খান, অস্ট্রেলিয়ার মেলবর্ন থেকে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আবদুস সালেক সূফি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইঞ্জি আবদুল জলিল খান।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালানা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশের বহু অভিজ্ঞ জনশক্তি পৃথিবীর অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তারা অনেকেই দেশের জন্যে কাজ করতে চান। এমন দক্ষ এনআরবি’দের নিয়ে দুবছর আগে একটা সম্মেলন হয়েছিল। তবে করোনার কারণে সম্মেলনের সুপারিশ বাস্তবায়ন কাজ ব্যাহত হয়েছে। অতি সম্প্রতি এনার্জিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ বাংলাদেশ এনার্জি ফোরাম গঠন করতে যাচ্ছেন। এনআরবি এবং স্থানীয় বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একসঙ্গে কাজ করলে দেশের অগ্রগতি একটা আলাদা মাত্রা পাবে।
তিনি আরও বলেন, ইআরডিতে এনআরবি বিষয়ে একটা ব্রাঞ্চ আছে। সেখানে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ আছে। আমাদের ১০০টা ইকোনমিক জোন হতে যাচ্ছে। নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ আমাদের এনআরবি যারা রয়েছেন তাদের কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতন দেওয়ার সক্ষমতা বেড়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরও বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে তাদের সার্ভিস কাজে লাগানোর সক্ষমতাও তৈরি হয়েছে।
আমরা জ্বালানি সক্ষমতা অর্জন করেছি। এখন এনার্জির সঙ্গে এনআরবি এক্সপার্টদের সংযোগ করা গেলে দেশের এগিয়ে যাওয়া আরও ত্বরান্বিত হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. সুলতান আহমেদ বলেন, এনআরবিদের বিশেষ যোগ্যতা রয়েছে। তারা দেশে ফিরে এসে কাজ করতে চান। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু আমরা বিদেশিদের উপর নির্ভর করে আছি। বিশেষ করে মেইনটেইনেন্সে। কোনো মেশিন জটিল নষ্ট হলে তা সোর্স দেশে পাঠাতে হয় বা সেখান থেকে এক্সপার্ট আনতে হয়। দেশেই এ ধরনের কাজ করা যায় কিনা তা খুঁজে দেখতে হবে।
ইআরডিতে এনআরবি নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। তবে ইআরডিতে এনআরবি বিষয়ে ব্রাঞ্চ করা জরুরি। সবটা মিলিয়ে একটা ইনস্টিটিউট হলে সবচাইতে ভালো হয়। এছাড়া আইনগত বিষয় রয়েছে। যেকোন কাজের সময় আইনী বাধ্যবাদকতা আছে। এনআরবিদের সংযুক্ত করলে সববিষয়ে গুনগত পরিবর্তন আসবে।
আমার মতে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয় বরং ইআরডি ডাটা বেইজ তৈরির উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান। আমার প্রস্তাব হলো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইআরডির সঙ্গে এনার্জি এন্ড পাওয়ার যুক্ত হয়ে এনআরবিদের ডাটা তৈরির কাজ করতে পারে। এনআরবিতে একটা উইংও করা যেতে পারে।
হুমায়ুন রশিদ তার বক্তব্যে বলেন, এনআরবিদের কাজে লাগাতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে। প্রবাসী বিশেষজ্ঞ আর ব্যবসার মাঝে বন্ধন তৈরি করতে হবে। আমাদের জনসংখ্যাকে কাজে লাগাতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে, ধারা পাল্টাতে হবে। শিক্ষার্থীরা সমসাময়িক শিক্ষা পাচ্ছে না। আমরা শিক্ষিত বেকার তৈরি করছি। আমাদের ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট বিদেশে গ্রহণ করা হয় না।
বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ভ্যালু এডিশন করা যায়নি। এসব ক্ষেত্রে এনআরবিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আইটি, এআই এসব ক্ষেত্রে তারা দক্ষতার ছাপ রাখতে পারে। তবে ইনফ্রাস্টাকচার বাড়াতে হবে, না হলে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে হাবিব সিদ্দিকী বলেন, এনআরবিরা সবাই নিজ নিজ পেশায় সফল। তাদের নিয়ে কাজ করা জরুরি। কারণ অদক্ষতা আমাদের অনেক ক্ষতি করে ফেলে। একদিনের কাজ করতে ৫ দিন লেগে যায়। সময় চলে গেলে এটা আর ফিরিয়ে আনা যায় না। ফলে আমরা দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারছি না।
এনআরবিদের কাজে লাগাতে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তবে গত কয়েক বছরে এ বিষয়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। আমার যারা বিদেশে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি তারা দেশে কাজ করতে চাই। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছি না। এ জন্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। এনআরবিদের কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। এত দেশ যেমন লাভবান হবে তেমন এনআরবিরাও লাভবান হবে।
শফিকুর রহমান ভূইয়া বলেন, বিদেশি কনসালটেন্টের চাইতে আমাদের দেশের অনেক বিশেষজ্ঞরা বেশি যোগ্য। আমাদের সবার আগে দরকার দেশপ্রেম, সততা এরপর দক্ষতা। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এমন মেগা প্রজেক্ট নিয়ে মতামত দেওয়ার যোগ্যতা তারা রাখেন। তবে অনেক সময় তাদের মতামত নেওয়া হয় না। এনআরবিরা বিদেশে অনেক যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছেন। দেশের উন্নয়নে তাদের কাজে লাগাতে হবে।
অনুষ্ঠানে আবু রেজা খান বলেন, এনআরবি’র অনেকগুলো ফোরাম আছে। এনআরবিদের এক ফোরামে আনতে হবে। যেমন এনআরবি ব্যাংক আছে, কিন্তু সেটা নিয়ে দ্বিমত আছে। এর আগে ব্রেন ড্রেন হয়েছে। তবে আমাদের সেখান থেকে ফিরে আসতে হবে।
এনআরবি’র যদি একটা ডাটা বেইজ হয় তাহলে যখন কোনো মন্ত্রণালয় প্রজেক্ট করতে যাবে তখন সংশ্লিষ্ট এনআরবি বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে পারবে। এনআরবির সঙ্গে লোকাল মেধার মেলবন্ধনের জন্য ফোরাম খুব জরুরি। এটা সরকারি-বেসরকারি মিলে হতে পারে।
সালেক সূফি বলেন, এ দেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের ভিত্তিমূল তৈরি করে দিয়েছিলেন। বুয়েটে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দেশের সম্পদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন করতে হলে আমাদের সোনার ছেলে দরকার।
বর্তমানে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এ উন্নয়ন ধারা বজায় রাখতে হলে এআই সহ নানা প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আর এজন্যই আমাদের এনআরবিদের কাজে লাগাতে হবে। শুধু বিদেশি এক্সপার্ট নিয়ে কাজ করলে চলবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের তালিকা তৈরি করতে হবে। সেকটর অনুযায়ী ডাটাবেজ করতে হবে। এছাড়া সরকারের পলিসি মেকারদের মনোভাব ইতিবাচক হতে হবে। তারা যেন এনআরবিদের ব্যবহার করার উদ্যোগ নেন। দ্রুত ডাটা বেজ করে ম্যান হাটিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন