প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে ডাক বিভাগকে সেবামুখী হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেনে, এখন বেশিরভাগ অনলাইন ব্যবসা চলছে ও ক্রয়-বিক্রয় চলছে। ডাক বিভাগকে পিছিয়ে থাকলে চলবে না। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে ডাক বিভাগকে আরও বেশি সেবামুখী হতে হবে। খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে ফলমূল যেন ডাকের মাধ্যমে পাঠানো যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ডাকের সেবাটাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ডাক অধিদপ্তরের নবনির্মিত সদর দপ্তর ‘ডাক ভবন’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, অনলাইনে বাজার করাসহ যাবতীয় সেবা পাওয়া যায়। ডাক বিভাগ থেকেও যেন এসব আধুনিক সেবা দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে, ফলমূল সবজি ও খাবার ওই গাড়িতে ভালো থাকে।

তিনি বলেন, একটা কুলিং সিস্টেম রাখতে হবে। গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে ডাকঘরগুলোতে চেম্বারও করতে হবে, যাতে পণ্য ভালো রাখা যায়। রান্না করা খাবারও যেন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠানো যায়। এজন্য কুলিং ও ফ্রিজিং সিস্টেম করে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তো ছোট ছোট পোর্টেবল বক্স পাওয়া যায়। যেহেতেু অনলাইন ক্রয়-বিক্রয় জনপ্রিয় হয়েছে, এতে ডাক বিভাগ পিছিয়ে থাকলে হবে না, ডাক বিভাগের এ ব্যাপারে আরও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যবসা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, লেটারবক্স অনেকে ভুলে গেছে। এখন সবাই এসএমএস ও মেইল দেয়। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন এই লেটারবক্স সদৃশ ভবন দেখলে চিঠি পাঠানোর কথা মনে পড়বে। ভবনে চিঠিপত্র ঝুলছে, চিঠি যাচ্ছে আসছে, এমন কিছু চিত্র যোগ করারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আগে ডিজিটাল সেন্টার থেকে যেসব সুবিধা পেত, ডাকঘরগুলোতেও একই সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ডাকঘর সেবার মানুষের দোরগোড়ায় আরও পৌঁছে দিতে ১১৮টি মেইল গাড়ি সংযুক্ত করেছি। গাড়ি চালানোর জন্য নারীদেরও তৈরি করছি।

ডাকঘরকে ডিজিটালাইজ করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ডাকঘর ডিজিটালে রূপান্তর হয়েছে। আগে আমরা পুরো বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ হাজারের মতো ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। সেইসঙ্গে ডাকঘরগুলোকে যাতে ডিজিটাল করা যায় তার জন্য কাজ শুরু করেছিলাম। আমরা ইতোমধ্যে ৩৮টি মডেল ডাকঘর নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছি। কিন্তু আমি চাইব সারাদেশে এটা করে দিতে। ঘরে বসে অনেকে কাজ করে পয়সা উপার্জন করতে পারবে। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান হবে, মানুষ সেবাটাও পাবে। আমাদের সেই ব্যবস্থাটাও করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

ডাক ভবনে এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিন্দন এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২টি বেজমেন্টসহ ১৪ তলা ভবন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তরের সদরদপ্তর শীর্ষক প্রকল্পটি গত ২০ মার্চ ২০১৮ তারিখ একনেকে অনুমোদিত হয়।

নবনির্মিত ডাক ভবনটিতে সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, আধুনিক পোস্টাল মিউজিয়াম, সুপরিসর অডিটরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া, ডে-কেয়ার সেন্টার, মেডিকেল সুবিধা, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা এবং সার্বক্ষণিক ওয়াইফাইসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিগত সুবিধা রাখা হয়েছে।

মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তৎকালীন ঢাকা জিপিও ভবনের কয়েকটি কক্ষ নিয়ে ডাক অধিদপ্তরের যাত্রা শুরু হয়। তীব্র স্থান সংকটের মধ্যে স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি ঢাকার গুলিস্তানে অবস্থিত ঢাকা জিপিওভবন এর তৃতীয় তলায় ডাক অধিদপ্তরের প্রশাসনিক সদর দপ্তরের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

ঢাকা জিপিও প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ভবনটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। ফলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় দাপ্তরিক কর্মপরিবেশ ও গতিশীলতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছিল। এ অবস্থায় ডাক অধিদপ্তরের সদর দপ্তর হিসেবে একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ও নান্দনিক স্বতন্ত্র ডাক ভবন স্থাপন করা ছিল একান্ত জরুরি ছিল।

এ সংকট নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অসামান্য আন্তরিকতায় বর্তমান সরকার তার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় উন্নত কর্মপরিবেশ ও প্রশাসনিক কাজে উদ্যম ও গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে ডাক অধিদপ্তরের সদর দপ্তর হিসেবে একটি স্বতন্ত্র ভবন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

মন্ত্রী জানান, ডাক ভবন উদ্বোধনে ডাক অধিদপ্তরের জন্য ঐতিকহাসিক এই ক্ষণটি স্মরণীয় রাখতে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।