“প্রশ্নপত্র ফাঁস-কোচিংয়ে যুক্তদের রেহাই নেই”
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস, কোচিং বাণিজ্য এবং নোট-গাইড পড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর সঙ্গে শিক্ষক যুক্ত থাকলে রেহাই দেওয়া হবে না। তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
বুধবার দুপুরে খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ অডিটোরিয়ামে খুলনা বিভাগের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং শিক্ষা বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, নৈতিকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চল এ সমাবেশের আয়োজন করে। সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর টি এম জাকির হোসেন।
শিক্ষার গুণগত মান প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরা ক্লাসে আসেন না, পড়ান না। অথচ বাড়িতে কোচিংয়ের ফাঁদ পেতে রেখেছেন। কিছু লোক শিক্ষকতার যোগ্য ও উপযুক্ত নন, কিন্তু শিক্ষকতায় ঢুকে পড়েছেন। তাদের কারণে শ্রেণিকক্ষে সঠিকভাবে লেখাপড়া না হওয়ায় শিক্ষার গুণগত মানও কমে গেছে। এ ধরনের শিক্ষকরা এ পেশা থেকে হয় নিজেরা সরে যাবেন, অন্যথায় তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে।
সমাবেশে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রসঙ্গে নুরুল ইসলাম নাহিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগে সরকারি বিজি প্রেসের কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো। তাদের ধরা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানসহ অন্য শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত কিছু শিক্ষক এ অনৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। শুধু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নয়, এখন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও ধনী পরিবারের সন্তানদেরও ‘কানমন্ত্র’ দিয়ে বেহেস্তে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে জঙ্গি বানানো হচ্ছে।
জঙ্গিবাদ বেহেস্তের নয়, দোজখে যাওয়ার পথ উল্লেখ করে তিনি জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এ সব শিক্ষার্থীদের প্রতি নজরদারি বাড়াতে অভিভাবক, শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও ইমামসহ সচেতন মহলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোনো শিক্ষার্থী একটানা ১০ দিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে তার পরিবারের কাছে খোঁজ নিতে হবে। যদি সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া যায় অথবা সন্দেহজনক কিছু মনে হলে আইনশৃংখলা বাহিনীতে জানাতে হবে।
তিনি শ্রেণিকক্ষে বেত বা লাঠি দিয়ে শাস্তির পরিবর্তে সন্তানের মতো আদর দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী করতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সরকার ২০১০ সালে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। শিক্ষকদের মান-মর্যাদা এবং বেতন-ভাতাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা অনেকগুণ বাড়ানো হয়েছে। আরও বৃদ্ধি করা হবে। কিন্তু ক্লাসে পাঠদান সঠিক না হলে সব কিছু ভেস্তে যাবে। তিনি নতুন প্রজন্মকে বিশ্বমানের শিক্ষায় গড়ে তুলতে শিক্ষক-অভিভাবকসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সচিব (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা) মো. সোহরাব হোসাইন, সচিব (কারিগরী ও মাদ্রাসা বিভাগ) মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ। উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসানসহ খুলনা বিভাগের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রধান এবং শিক্ষা বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করেন অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুস সউদ। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিএল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সাদিক জাহিদুল ইসলাম, শিক্ষক এনামুল ইসলাম, এফ এম হারুনার রশীদ, মো. শফিউদ্দিন নেছারী, সরদার আরজান আলী ও মরিয়ম সুলতানা প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন