প্রেমের টানে ধর্ম ও দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে ভারতীয় যুবতী, তবুও হলো না সংসার
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাবড়া থানার মারাকপুরের মেয়ে শবনম পারভীন আর বাংলাদেশের যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদত্তকাটি গ্রামে ছেলে বিষ্ণু মন্ডল। ধর্ম ছেড়ে শবনম পারভীন থেকে হয়েছেন বুল্টি মন্ডল আর তার পিতৃভূমি ভারত ত্যাগ করে এসেছেন বাংলাদেশে।
অবৈধ পথে বাংলাদেশে চলে আসার অভিযোগে তার ঠাঁই হয়েছে যশোর কারাগারে। গতকাল বুধবার বিকেলে কেশবপুর থানা পুলিশ তাকে আটক করে বৃহস্পতিবার জেলে পাঠিয়েছেন।
জানা যায়, সাত বছর আগে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাবড়া এলাকায় পাড়ি জমান যশোরের কেশবপুরের বিষ্ণু মণ্ডল। সেখানে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়াও করেছেন। এরপর একটি ইলেকট্রিকের দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করছিলেন। এর মধ্যে শবনম পারভীন বুল্টি নামের এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় বিষ্ণুর। দু’জনের পরিচয়, প্রেম অতঃপর প্রণয়ে পরিণত হয় তিন মাস আগে।
কলকাতার কালীঘাটে শাঁখা সিঁন্দুর পরে বিয়েও করেছেন বিষ্ণু-বুল্টি কিন্তু বুল্টির পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় মেয়ের পরিবারের দিক থেকে। কারন মেয়ের বাবা আতিয়ার রহমান স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা। এজন্য তারা দুজনে অবৈধ পথে বাংলাদেশে চলে আসেন। উঠেন বিষ্ণুর বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদত্তকাটি গ্রামে।
বুধবার বিকেলে হঠাৎ ওই গ্রামে পুলিশ এসে হাজির। সেখান থেকে কেশবপুর থানা পুলিশ এই দম্পতিকে তুলে আনে। পরে পাসপোর্ট আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে মেয়েটির বিরুদ্ধে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। প্রেমের টানে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে দেশান্তরি হয়েও সংসার করতে পারলো না বিষ্ণু-বুল্টি দম্পতি।
মেয়েটি দৃঢ় কণ্ঠেই দাবি করেছেন, বাংলাদেশে স্বামীর সঙ্গেই থাকতে চান।
কেশবপুর থানা-হাজতে শবনম পারভীন বুল্টি সাংবাদিকদের জানান, তার বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হাবড়া থানার মারাকপুর এলাকায়। তার বয়স ২২ বছর। হাবড়া শ্রী চৈতন্য কলেজের বিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়ালেখার ফাঁকে তিনি একটি কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার ছিলেন। বাবা মোঃ আতিয়ার রহমান পঞ্চায়েতের সদস্য ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা।
বিষ্ণু মন্ডলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। তিন মাস আগে হাবড়ায় তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়। সেখানে ধর্ম কোনো বাধা নয়। কিন্তু নিজের ও স্বামী নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রায় ২ মাস আগে কোলকাতার কালিঘাট মন্দিরে গিয়ে শাঁখা ও সিঁদুর পরেন। নাম দেন বুল্টি মন্ডল। মন্দিরের পুরোহিত তার ধর্মান্তরিত হওয়ার কথা জানতেন না।
এরপর রাতের আঁধারে কাঁটাতার পেরিয়ে সাতক্ষীরার কলারোয়া হয়ে তারা চলে আসেন স্বামীর বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সারগদত্তকাটি গ্রামে। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিন ভাইবোনের মধ্যে বুল্টি দ্বিতীয়। কথাগুলো বলার সময় অত্যন্ত দৃঢ়চেতা মনে হচ্ছিল বুল্টিকে। এসময় তিনি নিজেকে অন্তঃসত্ত্বা বলে দাবি করেন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থার কাছে বুল্টি অনুরোধ করেন, তাকে যেন স্বামীর সঙ্গে থাকতে দেয়ার জন্য আইনি সহায়তা দেয়া হয়। বিষ্ণু মন্ডল বলেন, প্রায় সাত বছর আগে তিনি অবৈধ পথে ভারতে যান। হাবড়ায় আত্মীয়দের বাসায় থাকতেন। ভারতে যাওয়ার পর থেকে বুল্টির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারপর ভালোবাসা থেকে বিয়ে।
তিনি বলেন, আমরা দু’জন সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে চাই। আমাদের ভালোবাসার মৃত্যু হবে না। ধর্ম আমাদের কোনো বাধা নয়। সীমানা আইন আমাদের প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে না। তিনি দ্রুত বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের কাছে তার স্ত্রীকে কাছে পেতে আবেদন করবেন বলে জানান।
কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে পাসপোর্ট আইনে শবনব পারভীন বুল্টির নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। তাকে যশোর আদালতে পাঠানো হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন