প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড

রাজধানীর পূর্বাচলে রাজউকের প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুদকের করা তিন মামলায় ৭ বছর করে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে ঢাকার বিশেষ জজ-৫-এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এজলাসে আসেন। এরপর তিনি দুদকের করা পৃথক তিন মামলায় এ রায় ঘোষণা করেন। মামলাগুলোতে শেখ হাসিনা, জয় ও পুতুলসহ আসামি রয়েছেন ২৩ জন।

গত ২৩ নভেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আদালত। যুক্তিতর্কে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন প্রত্যাশা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। তবে পলাতক থাকায় শেখ হাসিনাসহ পরিবারের পক্ষে নেই কোনো আইনজীবী। এদিকে মামলা তিনটির একটিতে শেখ হাসিনাসহ আসামি ১২ জন, আরেকটিতে জয় ও শেখ হাসিনাসহ ১৭ জন, বাকি আরেকটি মামলাতে পুতুল ও শেখ হাসিনাসহ আসামি ১৮ জন।

এর আগে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ৬ মামলা করে দুদক। সবগুলো মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। এরপর ৩১ জুলাই শেখ হাসিনাসহ এই তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।

এসব মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তারা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও গরিব দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩নং রাস্তার ৬টি প্লট শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ দেন।

জয় ও পুতুলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ :
জয়ের নামে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে আইন লঙ্ঘন করে মাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। পরে রেজিস্ট্রি করে সরকারি জমি আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া পুতুল মাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে রাজউকে কোনো আবেদন না করেই মায়ের কাছে আবদার করে আবেদন পেশ করেন। এরপর ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব আসামি মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন নিজে ও অন্যকে শাস্তি থেকে বাঁচার উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি নথি বিনষ্ট করেছেন অথবা গায়েব করেছেন মর্মে দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে।

যদিও জুলাই আন্দোলন দমনের চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে শেখ হাসিনাকে এরই মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

উল্লেখ্য, এর আগে সরকারপ্রধান হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার ২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। তবে আওয়ামী সরকারের পতনের পর আপিল বিভাগ থেকে খালাস পান তিনি। এর আগে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদেরও দুর্নীতির কয়েকটি মামলায় সাজার রায় হয়।