ফরহাদ মজহার যেভাবে বাসা থেকে বেরিয়ে যান (ভিডিও)

প্রতিদিনের মতো সোমবার (৩ জুলাই) ভোর তিনটা থেকে সাড়ে তিনটায় ঘুম থেকে ওঠেন লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবী ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার। এরপর কিছু সময় নিজের কম্পিউটারে লেখালেখি করেন। এরইমধ্যে একটি মোবাইল নম্বর থেকে তার ফোনে কল আসলে তিনি স্বাভাবিক পোশাকে নিচে নেমে আসেন এবং শ্যামলীর রিং রোডের ‘হক গার্ডেন’ এর বাসা থেকে থেকে বেরিয়ে যান।প্রতিবেদন বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে।

হক গার্ডেনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তিনি সকাল ৫টা ৫ মিনিটে তিন তলার ফ্ল্যাট থেকে নিচে নেমে আসেন এবং সোজা গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যান।

৫টা ২৯ মিনিটে ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আক্তারের ফোনে একটি কল আসে। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে ফরহাদ মজহার তার স্ত্রীকে বলেন, ‘ফরিদা, ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ এরপরই ফোনের লাইন কেটে যায়।

স্বজনরা জানান, ফরহাদ মজহার দুইটা মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করেন। কম ব্যবহার করা ফোন নম্বরটি থেকে কল আসে স্ত্রীর নম্বরে। প্রথম ফোনের প্রায় এক ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে একই নম্বর থেকে আরও একটা ফোন কল আসে ফরিদা আক্তারের কাছে। তবে দ্বিতীয় ফোনে কথা বলেন অন্যজন। ওই ব্যক্তি ফরিদা আক্তারের কাছে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।

প্রথমে কী করবে বুঝতে না পারলেও সকাল ৯টার দিকে পুলিশকে অবহিত করা হয় বলে জানান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন নূরুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘উনি প্রতিদিনের মতো সকালে উঠে লেখালেখি করছিলেন। একটি ফোন কল পেয়ে বাইরে বের হয়ে যান। এরপর প্রথমবার আসা ফোনে কথা বলেন ফরহাদ মজহার। আরেকবার ফোন আসে অপহরণকারীদের পক্ষ থেকে।’

পারিবারিক সূত্র আরও জানায়, এরপর আরেকবার একই নাম্বার থেকে সোমবার (৩ জুলাই) বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে ফোন কল আসে ফরিদা আক্তারের নাম্বারে। তখন জানতে চাওয়া হয়, ‘মুক্তিপণের টাকা রেডি আছে কিনা?।’

হক গার্ডেনের সিকিউরিটি গার্ড আরশাদুল হক বলেন, ‘ভোর ৫টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যান ফরহাদ মজহার। এ সময় তার মধ্যে কোনও ভয়ের চিহ্ন দেখা যায়নি।’ আরশাদুল বলেন, ‘স্যার এত সকালে সাধারণত বের হন না। তিনি নেমে আসার পর আমি সালাম দিয়ে গেট খুলে দেই। তিনি সালাম গ্রহণ করে বের হয়ে যান।’

বাসার সামনে কোনও লোকজন বা গাড়ি ছিল কিনা এমন প্রশ্নে আরশাদুল বলেন, ‘স্যার (ফরহাদ মজহার) বের হওয়ার আগে ও পরে বাসায় সামনে কাউকে দেখিনি। এমনকি কোনও গাড়িও ছিল না। স্যার সোজা সামনে হেটে মেইন রোডের দিকে চলে যান। এরপর কী হয়েছে আমি জানি না।’

স্বামীর নিখোঁজের ঘটনায় আদাবর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আক্তার। সন্ধ্যার পর দায়ের করা ডায়েরিতে ‘ফোন কল ও মেরে ফেলবে’ বলে যে কথাটি বলা হয়েছে সেটি উল্লেখ করেন তিনি।

স্বামীকে অপহরণ ও ফোন কলের ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি ফরিদা আক্তার। তার বরাত দিয়ে ঘনিষ্ঠজনরা জানান, সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনও কথা না বলার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা রয়েছে। তাই তিনি কোনও কথা বলছেন না।

এদিকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফরহাদ মজহারের বাসায় যান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বাসা থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা নিয়ে রহস্য করা ঠিক হবে না। আমরা পুলিশের ওপর আস্থা রাখছি। এখন পুলিশের দায়িত্ব তাকে (ফরহাদ মজহার) খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।’

নিখোঁজ ফরহাদ মজহারের কোনও সন্ধান পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘বলার মতো কোনও তথ্য এখনও আমাদের কাছে নেই। তবে পুলিশ ও গোয়েন্দারা কাজ করছে তাকে খুঁজে বের করতে। এ মুহূর্তে প্রধান কাজ হচ্ছে ফরহাদ মজহারকে খুঁজে বের করে জনসম্মুখে নিয়ে আসা।’

ফরহাদ মজহার প্রসঙ্গে র‌্যাব ৬ -এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটা তথ্যের ভিত্তিতে খুলনা অঞ্চলের বিভিন্নস্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তাকে উদ্ধারে তল্লাশি চালাচ্ছি। এখনও আমাদের তল্লাশি চলছে।’