ফরিদপুরের মধুখালীতে সাংবাদিকের ‘বাবা-মাসহ ৩ জনকে কুঁপিয়ে জখম

ফরিদপুরের মধুখালীতে সাংবাদিক সৌগত বসুর গ্রামের বাড়িতে বাবা-মাসহ তিনজনকে কুঁপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারী) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার ডুমাইন গ্রামের পূর্বপাড়া বোস বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে প্রতিবেশীরা খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে আসে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন, সাংবাদিক সৌগত বসুর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামলেন্দু বসু (৬৫), মা কাকুলী বসু (৬০) ও প্রতিবেশী কিশোরী প্রীতি মালো (১৫)। তাঁরা সকলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সাংবাদিক সৌগত বসু দৈনিক আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে ঢাকায় কর্মরত বলে জানা গেছে।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের চিকিৎসক অর্ণব জানান, শ্যামলেন্দু বসুর মাথায় গুরুত্বর আঘাত রয়েছে। তাঁর মাথার হাঁড় ভেঙে গিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার জন্য পরিবারকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যদের আঘাত গুরুত্বর নয়।

আহতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাতে তারা টিভি দেখছিলেন। এ সময় ঘরের ভেতর একজনকে দেখতে পায়। তাকে ধাওয়া দিলে বাড়ির দোতলা অবস্থান নেয়। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে শ্যামলেন্দু বসুর মাথায় কোপ দেয়। পরে অন্যরা এগিয়ে এলে তাঁদেরও কুঁপিয়ে আহত করে পালিয়ে যায় ওই দুর্বৃত্ত।

সৌগতের কাকিমা শুক্লা বসু বলেন, ‘আমরা ফরিদপুর শহরে থাকি। রাত সাড়ে আটটার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় ওনারা আমাকে ভিডিও কল দিয়ে বাঁচানোর আকুতি জানান। পরে আমি প্রতিবেশীদের জানালে তারা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’

সাংবাদিক সৌগত বসু বলেন, বাড়িতে আমার বাবা-মা ছাড়া কেউ থাকেনা এবং আমার অসুস্থ মাকে দেখাশুনা করত প্রীতি। তারা এখন গুরুত্বর অসুস্থ, পুরো ঘটনা এখনও বলা যাচ্ছে না। একজন নাকি একাধিক লোক ছিল তা বলা যাচ্ছে না। তবে, আমাদের কারো সাথে ঝামেলাও নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি চুরির কোনো ঘটনা নয়। আমাদের বাড়িতে অনেক রাত পর্যন্ত টেলিভিশন দেখে। কেউ চুরি করলে তখন আসবে কেন? এছাড়া কোনো মালামালও খোয়া যায়নি। এটা অবশ্যই হামলা বা অন্য কোনো ঘটনা হতে পারে।’

ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার জীবন কুমার মন্ডল জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে দুর্বৃত্তরা চুরি কিংবা ডাকাতির উদ্দেশ্যে শ্যামলন্দ দাদার বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে শ্যামল দা তার স্ত্রী ও তাদের দেখাশোনার জন্য প্রীতি মালো (১৫) নামের এক কিশোরী থাকেন। তাছাড়া বাড়িতে কেউ থাকেন না। তার তিন ছেলে বিভিন্ন জেলায় চাকুরী করেন।

তিনি বলেন, রাতে হঠাৎ তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে শ্যামলন্দ দা ও তার স্ত্রীকে কুপানো হয়েছে এবং কাজের মেয়েটিকে স্টীলের স্টীক দিয়ে মাথায় ও শরীরে আঘাত করা হয়েছে। তারা এসময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, এদের কারো সাথে শত্রুতা নেই। মনে হচ্ছে চুরি করতে ঢুকেছিল। দেখা ফেলায় হামলা করে।

এদিকে খবর পেয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শৈলেন চাকমা (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। এ সময় শৈলেন চাকমা বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে চুরি করতে গিয়ে ঘটনাটি ঘটেছে। ১৪-১৫ বছর এক কিশোর ওই বাড়িতে অবস্থান নেয়। বিষয়টি দেখতে পেয়ে গৃহকর্তা ধাওয়া দিলে তাকে এবং অন্যদের সোল দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তবে, বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।