ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা কত জানে না বিআরটিএ
ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যার সঠিক তথ্য তা জানে না স্বয়ং বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। প্রতিষ্ঠানটির কাছে দেশে কী পরিমাণ ফিটনেস সনদবিহীন গাড়ি রয়েছে, তারও সঠিক তথ্য নেই। এমনকি এই তথ্য কে দেবে সেটা নিয়েও গড়িমসি করছে বিআরটিএ। বৃহস্পতিবার সরেজমিন বিআরটিএ কার্যালয়ে জানতে গিয়ে এই প্রতিবেদককে এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে শুধু ঘুরতে হয়েছে। কোনো কর্মকর্তাই দায়িত্ব নিয়ে এ বিষয়ে তথ্য দেননি। মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ের অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে গেছেন সবাই। খবর পরিবর্তনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ফিটনেস নবায়ন না করা ৫৫ হাজার যানবাহনের তালিকা করেছে বিআরটিএ। তবে এর সংখ্যা কত— তার সঠিক হিসাব এখনো তৈরি করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
বিআরটিএর এক সূত্রে জানা গেছে, ফিটনেস নবায়ন না করার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার গাড়ি বিভিন্ন সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের। ফিটনেস সনদবিহীন সরকারি যানবাহন সবচেয়ে বেশি পুলিশের। এ বাহিনীর প্রায় ১১০০ যানবাহনের ফিটনেস সনদ ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে নবায়ন হয়নি।
বেসরকারি পরিসংখ্যানে দেশে ৫০ লাখের বেশি পরিবহন থাকলেও চলতি বছরের ৩১ জুন পর্যন্ত বিআরটিএর তথ্য বলছে— বর্তমানে সারা দেশে বাস, মিনিবাস ও হিউম্যান হলারসহ মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৭০টি।
এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় রয়েছে ১১ লাখ ৪৩ হাজার ২৪৩টি। এই পরিবহনের মধ্যে শুধু সাড়ে ২২ লাখ হচ্ছে মোটরসাইকেল। তবে এসব পরিবহনের মধ্যে কী পরিমাণ যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই, তার সঠিক কোনো তথ্য বিআরটিএর কাছে সংরক্ষিত নেই।
বেসরকারি হিসাবে সারা দেশে যানবাহনের চালকের সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। এসব চালকের মধ্যে চলতি বছরের ৩১ জুন পর্যন্ত বিআরটিএ অনুমোদিত লাইসেন্স রয়েছে ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮১৬ জনের। যার মধ্যে পেশাদার চালক ৮ লাখ ৩০ হাজার ৯০ জন। আর অপেশাদার ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৭২৬ জন। অবশিষ্ট সাড়ে ৫১ লাখ অবৈধ ও অদক্ষ চালক হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির এক জরিপে দেখা গেছে, বিআরটিএর নিবন্ধিত মোট পরিবহনের ৪০ শতাংশই ফিটনেসবিহীন।
সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ৫০ লাখ যানবাহনের মধ্যে মাত্র ৩৫ লাখ যানবাহনের নিবন্ধন রয়েছে। বাকি ১৫ লাখের কোনো সনদ নেই। আইন অনুযায়ী যেসব যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন নেই, সেগুলোর ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটি (বিআরটিএ) ২০টি ক্যাটাগরিতে পরিবহনের লাইসেন্স দিচ্ছে। এই ক্যাটাগরিগুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৮২ সাল থেকে চলতি বছরের ৩১ জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৪১৮টি অ্যাম্বুলেন্স, ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫০টি অটোরিকশা, ২০ হাজার ৪৭৩টি অটো-টেম্পু, ৪৫ হাজার ৩৭৭টি বাস, ৯ হাজার ৩২৯টি কার্গো ভ্যান, ২৮ হাজার ৪৭০টি কাভার্ড ভ্যান, ২৮ হাজার ৪২৯টি ডেলিভারি ভ্যান, ১৮ হাজার ২৫টি হিউম্যান হলার, ৫৫ হাজার ৮৬৩টি জিপ (হার্ড/সফট), ৯৯ হাজার ১৮৭টি মাইক্রোবাস, ২৮ হাজার ৬৩টি মিনিবাস, ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৯২টি মোটরসাইকেল, ১ লাখ ৮ হাজার ৬৯০টি ফিক-আপ (ডাবল/সিঙ্গেল কেবিন), ৩ লাখ ৪০ হাজার ২৮৯টি প্রাইভেট প্যাসেঞ্জর কার, ৯ হাজার ৮৭১টি স্পেশাল পারপোর্স ভ্যাহিক্যাল, ৫ হাজার ৬০টি ট্যাঙ্কার, ৪৫ হাজার ২৯৫টি ট্যাক্সিক্যাব, ৪১ হাজার ৬০৬টি ট্রাক্টর, ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪১০টি ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহন রয়েছে ১৭ হাজার ৮০৩টি।
মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী, একবার ফিটনেস সনদ সংগ্রহ করলে তা নবায়নের তারিখ থেকে পরের এক বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ফিটনেস সনদ পেতে হলে গাড়িসহ বিআরটিএ কার্যালয়ে হাজির হতে হয়। সেখানে অন্তত ৩০ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ফিটনেস সনদ প্রদান করা হয়।
বিআরটিএ’র এক পরিচালক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, বিআরটিএর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ফিটনেস নিতে অনেকে আসেনি।
তিনি বলেন, অনেক গাড়ি নিবন্ধন নিলেও নষ্ট হয়ে গেছে। সেই মালিক তো আসবে না ফিটনেস নিতে। এ জন্য সঠিক তালিকা করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, অনেক গাড়ির ফিটনেস নেই। আমরা মালিকদের চিঠি দিয়েছি। কিন্তু অনেকে গুরুত্ব দেয়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন