ফুটবলার হতে চাওয়া বুলবুল যেভাবে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি

বহু নাটকীয়তার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তবে জানেন কী, ক্রিকেট থেকে ফুটবলেই বেশি ঝোঁক ছিল তার। চোটে পরেই ফুটবল থেকে ক্রিকেটের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন বুলবুল। এতটাই ফুটবল ভালোবাসতেন যে উচ্চ মাধ্যমিকে অর্থনীতি পরীক্ষা না দিয়েই ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলেছিলেন ফুটবল ম্যাচ। ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলা বুলবুল দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছিলেন এইচএসসি পরীক্ষায়।

অথচ এই ফুটবলপ্রেমিকই বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান, বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ দলের অধিনায়কও বটে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন আইসিসি ও এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগে।

ঢাকার গেন্ডারিয়ার ছেলে বুলবুল ছোটবেলা থেকেই ছিলেন চঞ্চল। ফুটবলে ছিলেন দুর্দান্ত স্ট্রাইকার। ক্রিকেটে তার আপন ঘর মোহামেডানের বিপক্ষেই ফুটবল খেলতে নেমেছিলেন ভিক্টোরিয়ার হয়ে। লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়ায়, ফুটবল ছেড়ে যোগ দেন ক্রিকেটে, সেই ১৯৮৭ থেকে শুরু, এখনো আছেন ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা হয়েই।

আমিনুল ইসলাম আইসিসির উন্নয়ন বিষয়ক প্রোগ্রামে অস্ট্রেলিয়া, দুবাই ছোটাছুটি করেন এটা অনেকেই জানেন। তবে তাকে ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা বলার কারণটা একটু ভিন্ন। জানলে অবাক হবেন, তিনিই প্রথম চীনে পেশাদার ক্রিকেটের দুয়ার খুলে দেন। হাতকাটা সোয়েটার, পড়নে কেডস আর পিঠে একটা ক্রিকেট কিট ব্যাগ, এই নিয়েই চীনা রাজ্যে বিচরণ করেছিলেন তিনি।

যেখানে ক্রিকেট খেলাটার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দায়, সেই দেশেই তিনি ক্রিকেটের বীজ বপন করার চেষ্টা করেছেন। ভাষার বাধা কাটাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিখেছেন চাইনিজ ভাষাও।

চায়নার মতো বিশাল জনশক্তির দেশ যদি ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক দেখায় আখেরে লাভ ক্রিকেটেরই। তাই আইসিসির সহায়তায় সেই দেশে বাচ্চাদের ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে নিজে হাতেকলমে প্রশিক্ষন দিয়েছেন তিনি। চীন এখন ক্রিকেটে অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের কিছু খেলোয়াড় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ঘরোয়া লিগে জায়গাও করে নিচ্ছে। যার শুরুটা হয়েছিল আমিনুল ইসলামের হাত ধরেই।

ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেটা আসা এই ক্রিকেটার দেশও ছেড়েছিলেন অনেক আগেই। স্থায়ী নিবাস অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে আরও একবার উড়াল দিয়েছেন বাংলাদেশের পথে। দায়িত্বটা বেশ বড়, হ-য-ব-র-ল হয়ে থাকা দেশের ক্রিকেটকে একটা সঠিক দিশা দেখানো। সময়সীমা না থাকলেও বুলবুল চান টি-টোয়েন্টি খেলতে। এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। দেশের হয়ে কাজ করতে মুখিয়ে ছিলেন, সরকার তাকে চাইছেন বলেই এই সম্মানটা কাজ দিয়ে ফিরিয়ে দিতে চান বুলবুল।

ঢাকার স্থানীয় সেই ডানপিটে তরুন আজ বয়সের ভারে আরও পরিপক্ক ও দক্ষ। পারবেন কি তিনি দেশের ক্রিকেটকে একটু নতুন দিগন্ত উপহার দিতে? উত্তরটা তোলা রইলো সময়ের খাতায়।