ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালিতে তিন দিবসে শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা

বিশ্ব ভালোবাসা, বসন্ত ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে ফুল চাষে সরব হয়ে উঠেছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালির ফুলের মাঠ। হাতে রয়েছে আর মাত্র ক’দিন। এ তিন দিবসে অন্তত শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন স্থানীয় ফুল চাষিরা।

ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা ও আশপাশের এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনিগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি ও চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা ধরনের ফুল। চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে ফুলের উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আসন্ন তিনটি বিশেষ দিবস ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন ফুল চাষিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠজুড়ে ফুটেছে নানা রঙের ফুল। চাষিরা দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ফুলের পরিচর্যায়। উৎসব পর্যন্ত ফুল ধরে রাখতে এবং পোকামাকড় ও পচন রোধে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।
ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আসন্ন তিনটি দিবস সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো। মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হলেও এবার ফুলের ভালো দাম পাব বলে আশা করছি।’

একই এলাকার ফুল চাষি আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা যারা ফুলের চাষ করি, তারা মূলত উৎসব কেন্দ্রিক চাষ করি। বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার। এ বছর উৎপাদনে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

‘আমার জমিতে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ ও লিলিয়াম চাষ করেছি। সব ক্ষেতেই ফুল ভরা। এখন প্রতি পিস জারবেরা পাইকারি সাত থেকে আট টাকা এবং গোলাপ তিন টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সামনে এসব ফুলের দাম তিন গুণ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এ বছর ৮ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।’

আলমগীর হোসেন নামে এক চাষি বলেন, ‘উৎসবের বাজার ধরতে গোলাপগুলো ক্যাপ পরিয়ে রাখা হচ্ছে। এছাড়া নানা ধরনের ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে যাতে ফুল নষ্ট না হয়। এ বিক্রির ওপর সারা বছরের লাভ-লোকসানের হিসাব নির্ভর করবে। আশা করছি লাভবান হতে পারব।’

ফুল চাষি শাহজাহান কবীর বলেন, ‘আমি পাঁচ বিঘা জমিতে গাঁদা ও দুই বিঘা রজনিগন্ধা চাষ করেছি। ভালোবাসা দিবসে রজনিগন্ধা ও ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুল বিক্রি করব। এখন ফুল ধরে রাখতে এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ও কীটনাশক ব্যবহার করছি। আশা করছি এক একটি গোলাপের পাইকারি দাম ২৫-৩০ টাকা করে পাব।’

গদখালি ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, ‘এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে দেরিতে চাষাবাদ হলেও ব্যাপক ফুলের উৎপাদন হয়েছে। আসন্ন তিনটি উৎসব ঘিরে ফুল সংরক্ষণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। ফুলের দাম বাড়তে শুরু করেছে এবং তা আরও বাড়বে। ফলে অন্তত শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরে প্রায় ৬শ’ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয় এবং এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। আসন্ন বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ব্যাপক ফুল বিক্রি হলে চাষিদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।