রাজধানীতে ফেরার পথেও দ্বিগুণ ভাড়া, ট্রেনে সময় বিপর্যয়
ঈদ শেষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে রাজধানীতে ফিরছে মানুষ। টানা পাঁচদিন ছুটির পর রবিবার থেকে রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও লঞ্চঘাটে ফিরতি পথের যাত্রীদের ভিড় থাকলেও সোমবার ভিড় ছিল উপচে পড়া। তবে ট্রেনে সময় বিপর্যয় আর বাসে দ্বিগুণ ভাড়ার ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। যদিও কর্মজীবী মানুষের পদভারে চিরচেনা রাজধানী আবার স্বরূপে ফিরে আসছে।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসা প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রীদের ভিড়। আসনধারী যাত্রীর পাশাপাশি প্রায় সমানসংখ্যক যাত্রী দাঁড়িয়ে আসছেন ট্রেনে। এছাড়া ছাদে চড়েও আসছেন অনেকে। ফিরতে পারার আনন্দও ছিলো তাদের চোখেমুখে।
তবে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে প্রায় সব ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্বে চলাচল করছে। এতে যাত্রী দুর্ভোগ বাড়ছে। ঢাকায় পৌঁছাতে যেমন দেরি করছে প্রতিটি ট্রেন, তেমনই ঢাকা থেকে ছেড়ে যেতেও নিচ্ছে সময়।
তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নির্ধারিত গতির চেয়ে কমগতিতে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন ট্রেন কমলাপুরে বিলম্বে পৌঁছছে। আর সময় বিপর্যয়ের কারণে কিছুটা ভোগান্তি থাকলেও রেলে স্বস্তিতেই ফিরছেন যাত্রীরা।
ঢাকা রেল স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্ত্তী জানান, দুপুর দুইটা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আন্তঃনগর ও মেইল মিলিয়ে প্রায় ২৪ টা ট্রেন ঢাকায় এসেছে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলিতে ভিড় ছিল অস্বাভাবিক। যে কারণে যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে ট্রেনে ধীরগতি ছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ থাকতে পারে বলেও জানান এ রেল কর্মকর্তা।
সোমবার দুপুর একটা পর্যন্ত রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বেশিরভাগ ট্রেনেই দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বিলম্বে পৌঁছেছে। ফলে ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেন ছেড়ে যেতেও হয়েছে বিলম্ব। রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি এক ঘন্টা দেরিতে প্রবেশ করে স্টেশনে, ট্রেনটি সকাল ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ছেড়ে যায় সকাল সোয়া ৭টায়। নোয়াখালী এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৭টায় যাওয়ার কথা থাকলেও ছেড়ে যায় পৌনে ৯টায়। সুন্দরবন এক্সপ্রেস খুলনার উদ্দেশ্যে সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টায় ছেড়ে যায়।
চট্টলা এক্সপ্রেস ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ১০টায় ছেড়ে যায়। লালমনি ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি প্রায় তিন ঘন্টা দেরিতে প্রবেশ করে স্টেশনে, সকাল এগারটার পরে কমলাপুরে আসে ট্রেনটি। ট্রেনটির সকাল সোয়া ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও দেরিতে প্রবেশ করায় সেটি ছাড়া সম্ভাব্য সময় দেয়া হয় নাই।
নীলসাগর এক্সপ্রেস ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও, ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে দুপুর ১টায়। একতা এক্সপ্রেস (ঢাকা-দিনাজপুর) সকাল ১০টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে দুপুর ১টা ২০ মিনিট।
বাসেও ভিড়, দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে করেও ফিরছেন অগণিত মানুষ। তবে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বাড়িফেরত মানুষের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনও কোনও বাস কোম্পানির লোকজন যাত্রীদের কাছ থেকে দুই-তিনগুণ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। নিরুপায় হয়ে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া গুণেই ফিরছেন ঢাকায়।
সকালে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাতে ছেড়ে আসা বাসগুলো সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এসে থামছে। সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বান্দরবান, কুমিল্লা, চাঁদপুর, খুলনা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ ও উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলার বাস এই টার্মিনালে পৌঁছেছে।
মহাসড়কে যানজটের কবলে না পড়লেও যাত্রীরা বলছেন, বাসের ভাড়া দ্বিগুনেরও বেশি দিতে হয়েছে। সুপ্রিয়া হালদার নামের এক যাত্রী এসেছেন সিলেট থেকে। তিনি বলেন, সিলেট থেকে ঢাকা নন এসি গাড়ির (সাগরিকা) ভাড়া ৫শ টাকা। অথচ তিনি টিকেট কেটেছেন ১১শ টাকায়। কাউন্টার থেকে টিকিট ছাড়ার আগে সব টিকেট কালোবাজারে চলে যায় বলেও অভিযোগ এ যাত্রীর।
নোয়াখালী থেকে এসেছেন জাভেদ হোসেন নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ইকোনো পরিবহনের চারশ টাকার টিকেট ৯শ টাকায় কিনেছি। একই অভিযোগ এই বাসে করে ফেরা একাধিক যাত্রীর।
এদিকে সোমবার সকালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও ঢাকামুখী মানুষের ঢল দেখা গেছে। বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, খুলনা ও চাঁদপুর থেকে যাত্রী বোঝাই লঞ্চগুলো এসে ভোর থেকেই ঢাকায় আসতে শুরু করে। সোমবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৩০টি লঞ্চ সদরঘাট পৌঁছৈছে বলে বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানিয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন