বই ও শিক্ষকের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে শেরপুর জেলার নৃ-গোষ্ঠীদের মাতৃভাষা

নিজেদের ভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় হারিয়ে যেতে বসেছে শেরপুরের গারো পাহাড়ের গারো, হাজং, কোচ, বানাই ও ডালুসহ ৬ জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ভাষা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় লেখা বই ও শিক্ষকের অভাবে মাতৃভাষার চর্চা হচ্ছে না আদিবাসী ছেলেমেয়েদের।

জানা যায়, শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে গারো পাহাড় অবস্থিত। এ পাহাড়ি এলাকাসহ সারা জেলায় গারো, হাজং, কোচ, বানাই ও ডালুসহ ৬ জাতিগোষ্ঠীর অতন্ত ৭০ হাজার মানুষের বসবাস।

এসব গোষ্ঠীর মানুষের আছে আলাদা আলাদা ভাষা, আছে নিজস্ব সংস্কৃতিও। নিজ ভাষায় কথা বলাসহ সামনে এগোতে চান তারা। কিন্তু চর্চা আর সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তির পথে তাদের মাতৃভাষা।

পরিবারের সুখ-দুঃখের গল্প মাতৃভাষা করলেও এসব জাতিগোষ্ঠী মানুষের ভবিষ্যৎ স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে হয় বাংলা ভাষার হাত ধরেই। তাই দিন দিন তাদের মাতৃভাষা হারিয়ে যাওয়ায় আক্ষেপ তাদের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের ভাষার চর্চা না থাকায় এখন বাংলা ভাষার মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের মাতৃভাষা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের সীমান্তঘেঁষা বানাইপাড়ায় বেশ কয়েকটি বানাই পরিবার বাস করলেও প্রায় হারিয়েই গেছে ডালু জাতিগোষ্ঠী। ভাষার সঙ্গে হুমকির মধ্যে তাদের সংস্কৃতিও। ভাষার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো রূপ না থাকায় হারাতে বসেছে এ দুটি জাতিগোষ্ঠীসহ ৬টির ভাষা ও সংস্কৃতি।

এ ছাড়া সরকার কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তাদের ভাষায় বই দিলেও তা পড়ানোর মতো কোনো শিক্ষক নেই। তাই নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য বিদ্যালয়ে নিজ ধর্মের শিক্ষক চায় ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশা দেখানো হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই দ্রুত তাদের মাতৃভাষা টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ নেবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা ওইসব জাতিগোষ্ঠীর। শিক্ষার্থীরা বলছেন আমরা আমাদের ভাষায় কথা বলতে চাই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য ভাষা শিক্ষার আলাদা বই ও শিক্ষক দরকার।

ঝিনাইগাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, আদিবাসীদের ভাষা যেহেতু আমাদের ঐতিহ্য তাই এগুলো সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট পত্র দিবো।