বগুড়ার শিবগঞ্জের মধুগঞ্জেশ্বরী কালীপূজা ও মেলার আয়োজন সম্পন্ন, শুরুর অপেক্ষা

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্যাপুর গ্রামে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কার্তিক মাসের অমাবস্যায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহবাহী শ্রীশ্রী মধুগঞ্জেশ্বরী কালীপূজা।

আগামী ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বাংলা ১৪৩১ সনের ১৪ ই কার্তিক আমাবস্যা তিথীতে শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রতি বৎসরের ন্যায় এ বৎসরেও ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী মধুগঞ্জেশ্বরী কালীমাতার পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকমুখে জানা যায়, এটি উত্তরবঙ্গের অন্যতম ও বাংলাদেশের মধ্য বাতিক্রমধর্মী কালীপূজা। প্রাচীনতম এই পূজায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ তাদের মানত দান ও পূণ্য লাভের আশায় এই কালীপূজায় সমবেত হয়। শুধু দেশরই নয় প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীরা পূজা দর্শনের জন্য আসেন এবং মানত হিসাবে পাঠা, কবুতর, ফলমূল, মূখা,পূজার অর্ঘসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান করেন।

এই পূজার বিশেষ কয়েকটি ব্যতীক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা হলো- পাঠা লুট, বলিকৃত পাঠা লুটের উদ্দেশ্যে লুটে অংশগ্রহণকারী লোকজনের মাঝে ছুঁড়ে ফেলা হয়, শক্তি খাটিয়ে নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করলেই সেই পাঠা তাদের।

আরেকটি হলো থান লুট, পূজার স্থানে বা প্রতিমার সামনে উৎসর্গ করা বিভিন্ন ধরনের প্রসাদ ও রান্না করা উত্তপ্ত প্রসাদের পাতিল সাজানো থাকে যা হোম-যজ্ঞ শেষে পুরোহিত ঘণ্টা বাজালে যার যে প্রসাদ পছন্দ তাই সেটা লুট করে নিতে পারবে।

এই কালী প্রতিমা উচ্চতায় প্রায় ১১.৫ ফুট, প্রতিমাটিকে জমিদার বাড়ি হইতে কাধে করে শত শত নারী- পুরুষ শোভাযাত্রার মাধ্যমে মন্দিরে নিয়ে আসে।

প্রতিমা শিল্পী বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের মধ্য শুধু মাত্র রং এর কাজ ও টুকিটাকি কাজ বাকি আছে, তবে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যই প্রতিমার কাজ সম্পূর্ণ হবে।

সাদুল্যাপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ও মধুগঞ্জেশ্বরী কালী মাতা মন্দিরের বর্তমান ম্যানেজিং সেবাইত নারায়ণ চন্দ্র সরকার বলেন, আমি বাপ-দাদার আমল থেকে এই পূজা দেখে আসছি এবং জেনেছি আজ থেকে প্রায় তিনশত পঞ্চাঁশ বছর আগে মধুসুদন ভাদুরী নামে এক ব্যাক্তি এই পূজা স্থাপনা করেন এবং তার নাম অনুসারেই মধুগঞ্জেশ্বরী কালী মাতা নামকরণ হয়।

পরবর্তীতে মধুসুদন ভাদুরী তৎকালীন জমিদার রমন বিহারী সরকারকে পূজা-অর্চনা ও পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করেন এবং তাহার মৃত্যু হইলে রমন বিহারী সরকার সেবাইত হিসেবে
নিজ তহবিল থেকে পূজা শুরু করেন, রমন বিহারী সরকার মারা গেলে পর্যায়ক্রমে তাহার জৈষ্ঠ পুত্র মৃতঃ রমেশ চন্দ্র সরকার, মৃতঃ লব চন্দ্র সরকার, মৃতঃ কুশ চন্দ্র সরকার।

বর্তমানে আমি মৃতঃ রমন বিহারী সরকারের একমাত্র জৈষ্ঠ্য পৌত্র এই পূজার ম্যানেজিং সেবাইত হিসেবে এক যুগের বেশি সময় ধরে এই পূজা পরিচালনা করে আসছি।

পূজা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব প্রভাষক নয়ন সরকার বলেন, এটি একটি অতি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কালী পূজা, আমরা এই বংশের পঞ্চম পজন্ম এখন এই পূজা পরিচালনা করছি। তার কাছে পূজা ও পূজার আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ আশা করছি আমরা এই বছর পূজা উৎসব ভালো ভাবেই সম্পূর্ণ করতে পারবো।

এ পূজায় তিনি জেলাপ্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃংখলায় নিয়োজিত সকল বাহিনীর ও এলাকার সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

উপজেলা বাসীকে শুভ দীপাবলীর শুভেচ্ছা জানিয়ে শিবগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক সুবীর দত্ত জানান, শ্রীশ্রী মধুগঞ্জেশ্বরী কালীপূজা উত্তরবঙ্গ তথা সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে একটি ব্যাতীক্রমধর্মী পূজা। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও ভক্তবৃন্দ ও দর্শনার্থীর উপস্থিতি হয়। প্রতিবছর এ মেলা ও পূজায় প্রায় ২৫-৩০ হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীর আগমন হয়।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার জানান, প্রাচীন এই কালীপূজাকে ঘিরে আমরা সবরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার। বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি শুরু করেছেন। এ পূজাকে ঘিরে নিরাপত্তা বিঘ্ন হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই।