বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থান হাটের কাঁঠাল যাচ্ছে জেলায় জেলায়

বাংলা সনের দ্বিতীয় মাস হলো জ্যৈষ্ঠ মাস। জৈষ্ঠ্য মাসে আতিথেয়তায় বাঙালিরা ফলের পরসা সাজিয়ে বসে। আর এই জ্যৈষ্ঠ শেষে আষাঢ়ে জাতীয় ফল কাঁঠাল বেচাকেনার ধুম পড়ে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক মহাস্থান হাটে। সারা দেশে কাঁঠালের যে চাহিদার তার অনেকটায় যোগান দেয় বগুড়ার এই ঐতিহ্যবাহী মহাস্থানহাট।
শিবগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ হাটে বগুড়া ছাড়াও আশে পাশের জেলা জয়পুহাট, নওগা ও গাইবান্ধা থেকে কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল আমদানি করেন। চড়া দামে কাঁঠাল কেনাবেচা হয় মুলত ফল মৌসুমের শুরুতে এবং শেষে। তবে এবার আমদানি বেশি হওয়ায় অনেকটা স্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে এ হাটের কাঁঠাল।
সূত্র বলছে, গত বছর মহাস্থানের আমদানিকৃত কাঁঠাল প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ ট্রাক ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হতো। সে হিসেবে এবার কাঁঠালের আমদানি কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারপরেও আশানুরূপ ভাবে প্রতিদিনই মহাস্থান হাটে কাঁঠালের আমদানি হচ্ছে জেলায় জেলায়।
বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা ও পাশ্ববর্তী উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাঠাল সংগ্রহ করে থাকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারপর ভ্যানে করে নিয়ে আসে এ হাটে। তাদের নিকট থেকে আড়ৎদাররা কাঠাল কিনে কমিশনে সারা দেশে সরবরাহ করে থাকে। এবার প্রতিদিন ৮/১০ ট্রাকে করে ১০-১২ হাজার পিচ ছোট, মাঝারি ও বড় কাঁঠাল যাচ্ছে সারা দেশে।
বুধবার বিকালে সরেজমিনে ঐ হাটে গিয়ে দেখা যায়, কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধে জমে উঠেছে মহাস্থান হাট। পাইকার ও ক্ষুদ্র বিক্রেতারা ভিড় জমিয়ে কাঁঠাল কেনাবেচা করছে। সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার উজগ্রাম থেকে এনামুল হক ৩২ টি কাঁঠাল নিয়ে অটোভ্যান যোগে মহাস্থান হাটে বিক্রি করতে এসেন। তার ৩২টি কাঁঠালের দাম হাকানো হয়েছে ২৫৬০ টাকা।
শিবগঞ্জ উপজেলার অনন্তবালা গ্রামের ব্যবসায়ী মমিন মিয়া বলেন, মহাস্থান হাটে কাঁঠালের ব্যবসা হয় তিন মাস। এবারের ব্যবসা স্বাভাবিক।
ভ্যানবোঝাই করে মহাস্থান হাটে কাঁঠাল নিয়ে আসা পীরগাছার ব্যবসায়ী আরিফুল বলেন, প্রতিটি কাঠাল ৪০-৫০ টাকা কিনে ৭০ টাকায় বিক্রি করি। কাঁঠালের আকার বড় হলে দামের কিছুটা হেরফের হয়। প্রতিদিন আমরা গ্রাম-গঞ্জ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে মহাস্থান হাটে বিক্রি করে থাকি।
ব্যবসায়ীরা জানান, মহাস্থান হাটের কাঁঠাল যাচ্ছে ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, চট্রগ্রাম, লাকসাম, নোয়াখালী ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সিলেট থেকে আসা পাইকাররা জানান, এই এলাকাতে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠালের চাষ হয়। তাই মৌসুম জুড়ে অনেক কাঁঠাল পাওয়া যায় বলে সিলেট থেকে এসেছি মহাস্থানের বিভিন্ন আড়ৎ থেকে কাঁঠাল কিনে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাই।
মহাস্থানের ভাই ভাই আড়ৎ এর স্বত্বাধিকারী আব্দুস সবুজ মিয়া বলেন, আমরা প্রতি কাঁঠালে ৩টাকা করে কমিশন পাই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেপারীরা মহাস্থানহাটে কাঁঠাল কিনতে আসে। তারা আমাদের মাধ্যমে কমিশনে কাঁঠাল কিনে ট্রাক লোড দিয়ে তাদের মোকামে নিয়ে যায়। মহাস্থান হাট থেকে তারা কাঁঠাল কিনে তাদের এলাকায় প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে। তিনি আরও জানান মহাস্থান কাঁঠালের বাজারের কারনে আড়ৎ ব্যবসায়ী, লেবার শ্রমিক, অটোভ্যান ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল হান্নান দৈনিক বলেন , বগুড়ার শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত শিবগঞ্জ উপজেলায় কাঠালের বানিজ্যিক বাগান না থাকলেও বাড়ির আশেপাশে কাঁঠালের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হয়। পাশাপাশি আশেপাশের জেলা থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পাইকাররা এ হাটে কাঁঠাল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।



এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন