বগুড়ার শিবগঞ্জে উথলীতে নবান্ন মেলায় ক্রেতা বিক্রেতার ধুম
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2023/11/Shibganj-pic-2-1-900x450.jpg)
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2025/02/475351977_1256003665483861_2959209934144112011_n.jpg)
সনাতন পঞ্জিকার হিসাব অনুসারে শনিবার ছিলো পহেলা অগ্রহায়ণ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা নতুন ফসলে নবান্ন উৎসব পালন করে। এই উৎসব উপলক্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জের উথলীতে প্রতি বছর বসেছে নবান্ন মেলা।
কাছের ও দুরের ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত ছিলো এবারের নবান্ন মেলা। দেশের সব ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর কাছে এ উৎসবটি সার্বজনীন।
নবান্ন উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহি মাছ মেলা হয় এই উথলীতে। বড় বড় হরেক রকমের মাছের পসরা সাজিয়ে বসে এই মাছের মেলা।
পাশাপাশি নতুন সবজি, মিষ্টান্ন, মাংস, মাটির তৈরী তৈজাসপত্র, মরকি, চিরা ও গুড় কোনাবেচা হয় এ মেলায়। এ মেলা এলাকায় জামাই মেলা নামেও পরিচিত।
হাট ইজারাদার সূত্রে জানা যায়, এবারের মেলায় প্রায় দেড় হাজার মণ মাছ কেনাবেচা হয়েছে। ২ কেজি থেকে শুরু করে ২০ কেজি ওজনের ব্রিগেড, মাছ, বøাক কার্প, কাতল, রুই, কাতলা, বাগার, সিলভার কার্পসহ হরেক রকমের মাছ বিক্রি হয়েছে মেলায়।
তবে গত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম অনেকটায় বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। রুই-কাতলা ৫৫০-৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা দরে ব্লাককাপ, ব্রিগেড ও সিলভার কার্প মাছ বেচাকেনা হয়েছে। উথলী মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের ২২ গ্রামে স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
উথলী, রথবাড়ি, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকন্দপাড়া, গরীবপুর, দেবিপুর, গুজিয়া, মেদনীপাড়া, বাকশন, রহবল, মোকামতলা, লক্ষ্যকোলাসহ ২২ গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে ছিলো এ উৎসবের আয়োজন। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের আগেই নিমন্ত্রণ করা হয়।
এই মেলায় নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়াও মিষ্টি আলু ও কেশর (ফল) প্রতি কেজি ৩শত টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
শিবগঞ্জের মাছ ব্যবসায়ী প্রদীপ চন্দ্র দাস বলেন, তিনি নাটোরের সিংড়া এলাকা থেকে প্রায় ৫০মণ বিভিন্ন ধরনের মাছ বিক্রি করেছি। প্রতিটি মাছ দুই হাজার থেকে ৫হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মেলায় ঘুরতে আসা প্রবীন দর্শনার্থী মল্লিকা রানী (৯৫) বলেন, আমার বিয়ের পর থেকেই আমি এই মেলা দেখতে আসি। মেলায় এসে আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি এবং ১০ কেজি ওজনের বাগার মাছ কিনেছি।
অপর মাছ বিক্রেতা জয়পুরহাটে মাছ ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম জানান, মেলায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা ৫ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন।
মেলায় মাছ কিনতে আসা ব্রজেন সাহা জানান, বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসায় ৫হাজার ৪শ টাকা কেজি দিয়ে একটি কাতল মাছ কিনেছি।
শিবগঞ্জের সিনয়ির সাংবাদিক বজলুর রহমান বলেন, আমি উথলীতে বিয়ে করার সুবাদে প্রতিবছর শশুর বাড়িতে বড় মাছ কিনে দিতে হয়। এটাই এ মেলার ঐতিহ্য।
এই একদিনের মেলায় বিক্রেতারা হাটের খাজনা ও গাড়িপার্কিং এ বেশি টাকা নেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছে মেলা আয়োজন কমিটির বিরুদ্ধে।
শিবগঞ্জ উথলি হাটের ইজারাদার বাদশা ও ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য অংশ হিসেবে প্রতিবছর সুষ্ঠভাবে নবান্ন উপলক্ষে একদিনের এই নবান্নের মেলা হয়ে আসছে। আগে মেলাটি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও গত ৩০বছর ধরে ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুধু আশেপাশের জেলা নয় পুরো বগুড়া জেলা মানুষ নবান্নের বাজার করতে আসেন এ মেলায়। এবার মেলায় দেড় হাজার মণের বেশি মাছ কেনাবেচা হয়েছে বলে তিনি জানান। যার আনুমানিক বাজার মূল্য সাড়ে তিন কোটি টাকা।
![](https://ournewsbd.net/wp-content/uploads/2024/12/469719549_122234398946008134_2936380767280646127_n.jpg)
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন