বগুড়ার শিবগঞ্জে জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে
বগুড়ার শিবগঞ্জের পল্লীতে পৈত্রিক সূূত্রে প্রাপ্ত জমি নিয়ে মালিকানার দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। এই নিয়ে আদালতে মামলা মোকদ্দমা ও থানায় অভিযোগ দায়েরের ঘটনাও ঘটেছে।
বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানাধীন ধাওয়াগীর মৌজার ৩১০৬ নং দাগের ৪২ শতাংশ ভিটা জমি নিয়ে এ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। বিগত সরকারের পতনের পর বিষয়টি নতুন রুপ পেয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মৃত হবিবর রহমানের ৩য় পুত্র আতাউর রহমান দীর্ঘ ২০ বছর আগে পৈত্রিক সূত্রে ভাগ পায় ওই সম্পত্তির। তার বড় ভাই রেজাউল করিম জীবিত থাকা অবস্থায় ১৫ বছর পূর্বে ছোট ভাই আতাউর রহমানের সাথে ঐ সম্পত্তি মৌখিক রেওয়াজ বদল করে পার্শ্ববর্তী ৩১৬৯ নং দাগের ৫০ শতাংশের মধ্যে ২২ শতাংশ জমি আতাউর রহমানকে ছেড়ে দিলে সে ভোগ দখল করতে থাকে।
এরপর আতাউর রহমানের ছেড়ে দেওয়া ৩১০৬ দাগের ৪২ শতাংশ জমি একই গ্রামের মৃত বশারত ফকিরের ছেলে সাজু ফকিরের নিকট রেজাউল করিম জীবিত থাকা অবস্থায় বিক্রয় করে।
পরবর্তীতে ৩১৬৯ দাগের ২২ শতাংশ জমি থেকে আতাউর রহমানের ভাতিজা (মৃত রেজাউল করিম মুন্নুর ছেলে) মশিউর রহমান লিমন চাচা আতাউর রহমানকে বিতারিত করে।
এবিষয়ে লিমন বলে “এই জমি পৈত্রিক সূত্রে আমার বাবা মৃত রেজাউল করিম পাবে তাই আমি আমার বাবার মৃত্যুর পর জমিটি আমার নামে রেকর্ড করে নিয়েছি। মৌখিক রেওয়াজ বদলের কোন ভিত্তি নাই”।
তখন কোন উপায় না পেয়ে আতাউর রহমান তার পূর্বের দখল ছেড়ে দেওয়া ৩১০৬ নং দাগের জমিতে ফেরত এসে দখলে নেয়।
এদিকে রেজাউল করিম জীবিত থাকা অবস্থায় মৌখিক রেওয়ার করে ৩১০৬ দাগের জমি ধাওয়াগীর মৌজার সাজু ফকিরের নিকট বিক্রয় করে। ক্রয়কৃত জমির মালিকানা নিষ্কণ্টক করার জন্য সাজু ফকির জেলা বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করে। যাহার নং ৬৫২ পি/২০২৩ শিবঃ। সাজু ফকির দেশের বাহিরে অবস্থান করায় তার স্ত্রী হোসনে আরা (৫০) ও তার মেয়ে ফেমাস জমিটি দেখভাল করে।
এবিষয়ে হোসনে আরা ও তার মেয়ে ফেমাস বলেন, আমরা গত ২০০৯ সালে রেজাউল করিম মুন্নুর নিকট থেকে জমিটি ক্রয় করেছি। রেজাউল করিম মুন্নু ২০১৬ সালে মারা যাওয়ার পর আতাউর রহমান ও তার ভাতিজা মশিউর রহমান লিমনের মধ্যে জমা জমি নিয়ে কী সমস্যা হয়েছে তা আমরা জানিনা। আমরা যে দাগে জমি ক্রয় করেছি সেই দাগেই জমি নিয়েছি।
এবিষয়ে আতাউর রহমান বলেন, আমার ভাই রেজাউল করিম মুন্নু জীবিত থাকা অবস্থায় মৌখিক রেওয়াজ বদলের মাধ্যমে ৩১৬৯ দাগের ৪২ শতক জমির মধ্যে যে ২২ শতক জমি দিয়েছিল আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর আমার ভাতিজা কৌশলে তা নিজের নামে রেকর্ড করে নেয় এবং আমাকে বলে মৌখিক রেওয়াজের কোন মূল্য নাই। আমার ভাতিজা মশিউর রহমান লিমন তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সহচর হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে আমাকে ৩১৬৯ দাগের জমি থেকে বিতারিত করে। তখন বাধ্য হয়ে আমি আমার ৩১০৬ দাগের জমিতে ফিরে আসি। ৩১০৬ নং দাগের জমি পৈতৃক সূত্রে একমাত্র আমিই পাবো।
তিনি আরো বলেন, আমি আমার ৩১০৬ নং দাগের জমিতে ফিরে এসে ধান চাষ করেছিলাম। ধান চাষ শেষে ঐ জমিতে আমি ২ শতাধিক কলার চারা রোপনও করেছিলাম। কিন্তু গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে প্রতিপক্ষরা সবগুলো কলাগাছ কর্তন করে আমার ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে। আমি এই মর্মে শিবগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
এদিকে চাচা ভাতিজার দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ সাবু সহ স্থানীয়রা কয়েক দফা শালিসি বৈঠক করলেও হোসনে আরা, ফেমাস ও মশিউর রহমান লিমন তাতে সাড়া দেয়নি।
সার্বিক বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হান্নান বলেন, উভয় পক্ষের মধ্যে জমা জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এই সংক্রান্ত মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। একপক্ষ থানায় অভিযোগও দায়ের করেছে। উভয়পক্ষ সম্মত থাকলে জমির বিষয়টি আইনগতভাবে সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন