বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত চেয়ে কিশোরীর চিঠি আমলে নিল কানাডা
কানাডায় পালিয়ে থাকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে লেখা বাংলাদেশি কানাডিয়ান কিশোরী মাশকুরা তাবাসসুম তাথৈ এর চিঠির ইতিবাচক জবাব দিয়েছে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
সম্প্রতি তাথৈকে লেখা পাল্টা চিঠিতে জাস্টিন ট্রুডোর দপ্তর থেকে তার বিশেষ সহকারি জীবন সিং স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘জনাব’ নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর দাবি সম্বলিত চিঠিটি জননিরাপত্তা ও জরুরী অবস্থা প্রস্তুতি মন্ত্রী রালফ গুডেল এবং, আইন মন্ত্রী ও এটর্নি জেনারেল জুডি উইলসন রেনোল্ড এর দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
কানাডা থেকে কাউকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার জননিরাপত্তা ও জরুরী অবস্থা প্রস্তুতি মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় ও এটর্নি জেনারেলের দপ্তরের বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। আরও বলা হয়, ‘আমরা আশা করি, চিঠির বিষয়বস্তু যথাযথ বিবেচনা পাবে’।
গত মার্চ ৮ তারিখে বাংলাদেশি কিশোরী তাথৈ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক চিঠি প্রেরণ করে। সেখানে তাথৈ লিখেছিল যে, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আত্মস্বীকৃত খুনি নুর চৌধুরী কানাডাকে তার নিরাপদ আশ্রয় বানিয়ে ফেলেছে। গত ২১ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নুর চৌধুরী টরেন্টোতে নির্ঝঞ্ঝাট জীবন যাপন করছে। কানাডার মতো একটি দেশ নুর চৌধুরীর মতো আত্মস্বীকৃত খুনির নিরাপদ আবাসস্থল হতে পারে না।
কানাডায় ‘রিফিউজি স্ট্যাটাস’ আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত, এমনকি ডিপোর্টেশন আদেশ মোকাবেলা করার পরেও কানাডা থেকে নুর চৌধুরীকে আইনি কারণে বহিষ্কার করা যাচ্ছে না। অন্য কোন দেশে ফেরত গেলে ফাঁসির সাজা ভোগ করতে পারেন, এমন কোনো ব্যক্তি কানাডা ভ্রমণে আসলে, নিজে উদ্যোগী হয়ে না ফেরত গেলে, তাকে সরকার জোর করে ফেরত পাঠাতে পারবে না মর্মে ২০০১ সালে কানাডার সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তারই সুফল ভোগ করছে বঙ্গবন্ধুর খুনি নুর চৌধুরী। কানাডার অভিবাসন এবং উদ্বাস্তু মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে চারবার নুর চৌধুরীর দরখাস্ত নামঞ্জুর করেছে।
তাথৈ লিখেছিল, ‘অন্যদের মতো আমিও আশায় বুক বেঁধে আছি, মানবতাবিরোধী অপরাধ করা নুর চৌধুরীকে অচিরেই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে, যাতে করে সে তার সাজা ভোগ করতে পারে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার দায়ে নুর চৌধুরীসহ আরও ১১জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেয়। আসামিদের অনেকের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। নুর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে এক্ষেত্রেও ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি’।
তাথৈ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে তার বাবা ই ট্রুডোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে লিখেছিল- ‘১৯৭০ সালে নির্বাচনের পরে তৎকালীন পাকিস্তানে বেসামরিক শক্তির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে ছিলেন আপনার বাবা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন আপনার বাবা। এমনকি পাকিস্তানে অস্ত্র রপ্তানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন তিনি’।
আমরা সবাই জানি, এ বছর কানাডা কনফেডারেশনের ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করবে। আমাদের আশা, বঙ্গবন্ধুর খুনি নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে আপনি ২০১৭ সালকে চিরস্মরণীয় করে রাখবেন।’
মাশকুরা তাবাসসুম তাথৈ (১৪) নামের এই বাংলাদেশি কানাডিয়ান কিশোরী বর্তমানে ম্যাপল রিজ স্কুলের গ্রেড-৮ এর ছাত্রী এবং স্কুলের ছাত্র সংসদের বর্তমানে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছে।
২০১২ সালের ২৮ আগস্ট গ্রেড-৪ এর ছাত্রী থাকা অবস্থায় তাথৈ তার আব্বা আম্মার সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পাড়ি জমায়। ২০১৬ সালে তাথৈ তার সাবেক স্কুল অটোয়া এমিলি কার মিডল স্কুলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেছে। ফরেস্ট ভ্যালি ইলিমেন্টারি স্কুল এ গ্রেড-ফাইভ পড়াকালীন সে স্টুডেন্ট কাউন্সিল এর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবেও কাজ করেছে। ভবিষ্যতে একজন আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করতে চায় তাথৈ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন