বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতির পিতার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে দেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তুলতে সকলকে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীনতার রূপকার।’
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ আহ্ব্ন জানিয়ে আরো বলেন, ‘ঘাতকচক্র জাতির পিতাকে হত্যা করলেও তাঁর নীতি ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদত বার্ষিকী। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর দিন। আমি শোকাহত চিত্তে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। জাতীয় শোক দিবসে পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘১৯৭৫ সালের এদিনে দেশের স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে ধানমণ্ডির নিজ বাসভবনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হন। একই সাথে শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ আরো অনেকে। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড কেবল বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীনতার রূপকার। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮-এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬-দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনসহ বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি।’
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিজয় অর্জন করে। বিশ্বখ্যাত নিউজউইক ম্যাগাজিন ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুকে ‘পয়েট অব পলিটিক্স’ হিসেবে ভূষিত করে, যা ছিল তাঁর নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বসম্প্রদায়ের অবিচল আস্থা ও গভীর শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ। তিনি ছিলেন অসম সাহসী, হিমালয়সম অটল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ঘাতকদের মেশিনগানের মুখেও তিনি বজ্রকণ্ঠে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোরা কী চাস?’। জাতির পিতার চিন্তা-চেতনায় সবসময় কাজ করত বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশ। তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য আজ এ দেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে একটি সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। একাত্তরের পরাজিত শক্তি তাঁকে হত্যা করে জাতির অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিলো। ঘাতকচক্র সাময়িকভাবে সফল হলেও দীর্ঘমেয়াদে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে ধাবমান।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের মাধ্যমে দেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। জাতির পিতার পলাতক হত্যাকারীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর হবে- জাতীয় শোক দিবসে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন