বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক-২০২২ পেলো পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়
প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক’ পেলেন প্রশাসনের ২৭ জন কর্মকর্তা ও ৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান। আগে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা, মননশীলতা ও উদ্ভাবনী প্রয়াসকে উৎসাহিত করতে ‘জনপ্রশাসন পদক’ দেওয়া হতো। এবার ‘জনপ্রশাসন পদক’-এর নাম বদলে নতুন আঙ্গিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানে কর্মকর্তাদের এ পদক দেওয়া হলো।
আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২৭ জন কর্মকর্তা, তিনটি মন্ত্রণালয় ও একটি ইউনিটের কাছে পদক তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা, ২০২২’ অনুযায়ী সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন প্রশাসন, মানব উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দুর্যোগ ও সংকট মোকাবিলা, অপরাধ প্রতিরোধ, জনসেবায় উদ্ভাবন, সংস্কার, গবেষণা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হয়েছে।
এবার ‘সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা’য় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তি দর্শন বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমি পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের ধারণা বাস্তবে রূপায়ণ করে ‘উন্নয়ন প্রশাসনে’ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক পেয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় উন্নয়ন প্রশাসনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দারিদ্র বিমোচন, ড্রেজিং কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমি পুনরুদ্ধার, উদ্ধারকৃত জমিতে বনায়ন, আশ্রয়ন, শিল্প পার্ক স্থাপন, নিচু জমি উচু করে ভিলেজ প্ল্যাটফর্ম তৈরী করাসহ দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে যার স্বীকৃতি স্বরুপ এই সম্মাননা অর্জন।
এছাড়াও নদী ড্রেজিং এর মাধ্যমে ১৭টি জেলায় ৩৪১৭.২৫ হেক্টর ভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪৭৬৩৮২.৬২ লক্ষ টাকা এবং ক্রসড্যাম/ক্লোজার নির্মাণের মাধ্যমে ভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে ১০২৮২১.৫০ হেক্টর।
উল্লেখ্য, সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এপর্যন্ত ৩ বার জনপ্রশাসন পদক গ্রহণ করেছেন। তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পদায়ন হওয়ার পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) এবং এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালীন তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক পুরস্কার ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি’ (ডব্লিউএসআইএস) পুরস্কার টানা ৫বার গ্রহণ করেন।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশ স্কাউটস এর সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘রৌপ্য ব্যাঘ্র’ এবং বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন কর্তৃক অতীশ দীপংকর শান্তি পুরস্কার অর্জন করেছেন। কবির বিন আনোয়ার ১৯৬৪ সালের ২২ মে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
‘মানব উন্নয়ন’ ক্ষেত্রে দলগতভাবে পদক পেয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক;বাগেরহাট এর মোল্লারহাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মোল্লারহাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মোল্লারহাটের উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব কাজী মো. আব্দুর রহমান (নেত্রকোণার সাবেক জেলা প্রশাসক), নেত্রকোণার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক (বর্তমানে পিআরএল ভোগরত), নেত্রকোণা খালিয়াজুরির উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) , খালিয়াজুরির সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) (বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে যোগ দেওয়া) ও নেত্রকোণার মদনের উপজেলা কৃষি অফিসার ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ ক্ষেত্রে পদক পেলেন।
‘দুর্যোগ ও সংকট মোকাবিলা’য় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক , চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) , চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)পদক জিতেছেন।
‘অপরাধ প্রতিরোধ’ ক্ষেত্রে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক, গোপালগঞ্জের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (মাদারীপুরের স্থানীয় সরকারের সাবেক উপ-পরিচালক), মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ-আবু-জাহের দলগতভাবে পদক পেয়েছেন।
‘জনসেবায় উদ্ভাবন’ ক্ষেত্রে দলগতভাবে পদক পেলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, ঢাকার জেলা প্রশাসক ও সুরক্ষা ডেভেলপার ইউনিট। ভূমি তথ্য ব্যাংকের জন্য ‘সংস্কার’ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পদক পেয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
এছাড়া ‘গবেষণা’য় বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান ও ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) পারভেজুর রহমান পদক পেয়েছেন।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক , অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) , অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) , সহকারী কমিশনার ফাহিমা বিনতে আখতার ও নাসরিন সুলতানা নিপা ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ খাতে পদক জিতে নিয়েছেন।
জনপ্রশাসনে কর্মরত কর্মচারীদের সৃজনশীল ও গঠনমূলক কার্যক্রম উৎসাহিত করার মাধ্যমে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়নে উৎসাহিতকরণ ও সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অধিকতর গতিশীল করতে সরকার ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই প্রথমবারের মতো জনপ্রশাসন পদক দেয়।
২৩ জুলাই জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবসের অনুষ্ঠান উদযাপনের অংশ হিসেবে এই পদক দেওয়া হয়। পদক দিতে ‘জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা ২০১৫ (২০১৬ সালে সংশোধিত)’ করা হয়। এ বছর সেই নীতিমালা বাতিল করে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক নীতিমালা, ২০২২’ প্রণয়ন করা হয়।
পুরস্কার হিসেবে একটি স্বর্ণপদক (২১ ক্যারেট মানের ১৫ গ্রাম ওজনের) এবং রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সংবলিত সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যক্তিগত অবদানের জন্য ২ লাখ টাকা, দলগত অবদানের জন্য ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। দলগত অবদানের ক্ষেত্রে দলের সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ৫ জন। দলের প্রত্যেক সদস্যকে স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট দেওয়া হয় এবং নগদ পুরস্কারের ৫ লাখ টাকা সদস্যদের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করা হবে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বর্ণপদক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি/দলের অন্তর্ভুক্ত কর্মচারীরা এবং এর আগে জাতীয় পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক প্রাপ্ত ব্যক্তি/দলের অন্তর্ভুক্ত কর্মচারীরা নামের শেষে ‘পাবলিক অ্যাডমিস্ট্রেটিভ অ্যাওয়ার্ড’ এর সংক্ষিপ্তরূপ ‘পিএএ’ টাইটেল ব্যবহারের পরিবর্তে সরকারি আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে পোশাকের সঙ্গে সরকার অনুমোদিত বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদকের মনোগ্রাম ব্যবহার করতে পারবেন বলে নতুন নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
পুরস্কার প্রদান পর্বটি পরিচালনা করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম। তিনি জানান, ‘পরিবেশন উন্নয়ন’ এবং ‘সামাজিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ ক্ষেত্রে মানসম্মত আবেদন না পাওয়ায় এ দুটি ক্ষেত্রে এবার পদক দেওয়া হচ্ছে না।
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ব্রিটিশ আমলের প্রশাসনের পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সরকারি কর্মচারীরা এখন আর জনগণের শাসক নন, তারা এখন জনগণের সেবক। সুশাসন ও জবাবদিহিতা এখন প্রশাসনের মূলমন্ত্র।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জনপ্রশাসন পদকের মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার স্বীকৃতি পাচ্ছেন। এ পুরস্কার তাদের মধ্যে উদ্দীপনা সঞ্চার করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন