বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবির্ভাব বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা…
বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্ব একটি ভাষাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি রূপকথার নায়কের মতোই উজ্জ্বল। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইতালিতে ম্যাটসিনি ও গ্যারিবল্ডি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ওয়াশিংটন ও ভারতের মহাত্মা গান্ধী যেমন; বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তেমনই একজন মহানায়ক।
স্বাধীনতার পর নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন করে দেশের জনগণকে স্থিতিশীলতা এনে দেওয়াই ছিল তার মূল লক্ষ্য।স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর কাছে মূল লক্ষ্য ছিল পুরোনো পাকিস্তানি শাসন-শোষণের রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো ভেঙে ফেলা। এবং দুঃখী ও মেহনতি মানুষের রাজনীতি, গণমানুষের স্বার্থে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি, নিজ দেশের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন।
তাই বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘আমরা চাই শোষিতের গণতন্ত্র, আমরা চাই না শোষকের গণতন্ত্র।’ বঙ্গবন্ধু শোষিতের গণতন্ত্র বলতে এমন গণতন্ত্রকে বুঝতেন, যা শোষিত মানুষের জন্য। শোষিত মানুষের স্বার্থে এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত।
বিশেষ করে কৃষক-শ্রমিক, দুঃখী-মেহনতি মানুষকে যেন কেউ শোষণ করতে না পারে। বঙ্গবন্ধু শোষণমুক্ত সোনার বাংলা গঠনের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। শ্রেণিবিভক্ত সমাজে পশ্চাৎপদ অবহেলিত বিশাল জনগোষ্ঠী এবং দেশপ্রেমিক ব্যক্তি, দল ও শক্তির সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনড়।১৯৭২ সালের শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ নেতারা দলের এক নতুন ভাবাদর্শ প্রচার করতে শুরু করে।
বঙ্গবন্ধু ঘোষিত জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা-এই রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে সৃষ্ট এই তত্ত্বের নাম হয় মুজিববাদ। দেশব্যাপী মুজিববাদের প্রচারাভিযানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঘোষণা করেন যে- এই তত্ত্বের লক্ষ্য হলো বাঙালি জাতিকে সংহত করা।
মুজিববাদ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর ব্যাখ্যা ছিল নিম্নরূপ, ‘মুজিববাদকে ভাবাদর্শ হিসেবে ধরতে গেলে দার্শনিকদের তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। আমি শুধু মুজিববাদ নামে যা আখ্যায়িত করা হয়েছে, সে সম্পর্কে নিজে যা বুঝি, তা বলতে পারি।
সবার আগে আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্র, গণতন্ত্রে বিশ্বাসের সাথে সাথে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, শুধু শোষণমুক্ত সমাজেই গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব। ঠিক এ জন্যই আমি গণতন্ত্রের সাথে সমাজতন্ত্রের কথা বলি। আমি আরো বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে যত ধর্ম আছে, তার সবগুলোর সমঅধিকার থাকবে।
এর অর্থ আমি বুঝি ধর্মনিরপেক্ষতা, ধর্মপালনের স্বাধীনতা। শেষে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা, তা হলো বাঙালি সংস্কৃতি, ভাষা, কৃষ্টি এবং সমগ্র বাঙালি পরিবেশে অনুপ্রেরণা জোগানোর প্রয়োজনীয়তা। যাকে আমি জাতীয়তাবাদ বলে আখ্যায়িত করি। (সূত্র:গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, প্রস্তাবনা)
১৯৭২ সালের ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও সমাজতন্ত্রকে নির্বাচন করা হয়। এই চার মূলনীতির ভিত্তিতে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়।বাংলাদেশের সংবিধানেও কতকগুলো রাষ্ট্রীয় মৌলিক নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মহান সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে, যে সকল মহান আদর্শ বা চেতনা আমাদের বীর বাঙালি জাতিকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদের প্রাণ উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল তা হলো-জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতা এই মহান সংবিধানের মূলনীতি হবে। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে ৮নং অনুচ্ছেদ থেকে ২৫নং অনুচ্ছেদ পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহ সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
প্রথমত:জাতীয়তাবাদ বাঙালি জাতীয়তাবাদ হলো বাঙালি থেকে বাংলাদেশ। বাঙালিরা দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে বাংলাদেশের সৃষ্টি করেছেন। তা করেছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী নেতৃত্বে। বাঙালিদের এ যুদ্ধ হাজার বছরের সংগ্রামের ঘনীভূত রূপ। তাই ব্যাপকভাবে বলতে গেলে বাঙালি জাতীয়তাবাদ হলো বাঙালি জাতির প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসের বিকশিত গতিধারার রূপায়ণ। এর পরিধি অসীম। জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল চরম মরণ-সংগ্রামে।
আমাদের মহান সংবিধানের প্রধান চারটি স্তম্ভের মধ্যে একটি অন্যতম স্তম্ভ জাতীয়তাবাদ। অভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে একই ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে লালিত, বাঙালি জাতি ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে নিজেদের ঐতিহ্য ও মননে পাকিস্তানি জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা মনে করতে শুরু করে। বাঙালি সাধারণ জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তি সংগ্রামের মহান চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
তাই আমাদের সংবিধানের ৯নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট, যা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছিলেন সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।
বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতির মূলে রয়েছে ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অভিন্নতা। বাঙালিরা একটি স্বতন্ত্র জাতি। এই জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করেই ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে তারা বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বস্তুত আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি। আমরা একটি স্বতন্ত্র, স্বাধীন জাতি। এ স্বাতন্ত্র্যবোধ ও স্বকীয়তাই আমাদের এক সুদৃঢ় ঐক্যে ঐক্যবদ্ধ করেছে।দ্বিতীয়তঃ সমাজতন্ত্র বঙ্গবন্ধু মনে করতেন- দুর্নীতি প্রথাগত এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থার একটি প্রক্রিয়াজাত ফলাফল।
সেজন্য বঙ্গবন্ধু ঘুণে ধরা পুঁজিবাদী সমাজকে ভেঙে নতুন সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বাকশাল কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন।প্রচলিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অর্থ সম্পদের অবাধ ও মুক্ত প্রতিযোগিতা চলে। দরিদ্র জনসাধারণ এ ধরনের প্রতিযোগিতায় সমান সুযোগ পায় না। শুধু সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে এবং তখনই আর্থসামাজিক, মানবাধিকার ও জনগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা আসতে পারে।
সেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য শোষণহীন সমাজব্যবস্থা গড়তে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু।সমাজতন্ত্রের প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘আমাদের সমাজতন্ত্র মানে শোষণহীন সমাজ। সমাজতন্ত্র আমরা দুনিয়া থেকে হাওলাত করে আনতে চাই না। এক এক দেশ, এক এক পন্থায় সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে। সমাজতন্ত্রের মূলকথা হলো, শোষণহীন সমাজ। সেই দেশের কী ক্লাইমেট, কী ধরনের অবস্থা, কী ধরনের মনোভাব, কী ধরনের আর্থিক অবস্থা, সব কিছু বিবেচনা করে স্টেপ বাই স্টেপ এগিয়ে যেতে হয় সমাজতন্ত্রের দিকে।
রাশিয়া যে পন্থা অবলম্বন করেছে, চীন তা করে নাই, সে অন্যদিকে চলেছে। রাশিয়ার পার্শ্বে বাস করেও যুগোস্লাভিয়া, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া তাদের দেশের এনভাইরমেন্ট নিয়ে, তাদের জাতির ব্যাক গ্রাউন্ড নিয়ে, সমাজতন্ত্রের অন্য পথে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যান- ইরাক একদিকে এগিয়ে চলেছে, আবার মিসর অন্যদিকে চলেছে।মহান সংবিধানের অন্যতম একটি মূলনীতি হলো সমাজতন্ত্র। বাংলাদেশে একটি শোষণমুক্ত এবং সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করার কথা বলা হয়েছে।
সংবিধানের ১০নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে যে, মানুষের ওপর মানুষের শোষণের অবসান করে ন্যায়ানুগ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে শোষণহীন সমাজব্যবস্থা কায়েম করা হবে। সমাজতন্ত্রের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে সংবিধানে উল্লেখ করা হয় যে, রাষ্ট্র তার প্রয়োজনে যেকোনো ধরনের সম্পত্তিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীনে গ্রহণ করতে পারবে। সংবিধানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মেহনতি মানুষকে সকল প্রকার শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। রাষ্ট্রের উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার মালিক হবে জনগণ তথা রাষ্ট্র। আইনের ধারা আরোপিত সীমার মধ্যে ব্যক্তিগত মালিকানার বিধানও রাখা হয়।
চতু্র্থতঃ গণতন্ত্র বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্র হলো এমন এক গণতন্ত্র, যা গরিব মানুষের জন্য, তাদের স্বার্থে এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত। এর অর্থ হল এই যে, আজকে যে প্রচলিত গণতন্ত্র রয়েছে, যেখানে সংখ্যালঘিষ্ঠ কতিপয় ধনীক চক্র রাষ্ট্রক্ষমতাকে দখল করে আছে, এবং তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। এর পরিবর্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিপুল গণ-মানুষ সেই ব্যবস্থাটাকে বদলে দিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনায় সরাসরি অংশ নেবে, এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করবে।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ”আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্র, সেই গণতন্ত্র যা সাধারণ মানুষের কল্যাণ সাধন করে থাকে।
আগেও আমরা দেখেছি যে, গণতন্ত্র যে সব দেশের চলেছে, দেখা যায়, সেই সব দেশে গণতন্ত্র পুঁজিপতিদের প্রটেকশন দেওয়ার জন্য কাজ করে। সেই গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা চাই, শোষিতের গণতন্ত্র এবং সেই শোষিতের গণতন্ত্রের অর্থ হলো- আমরা দেশে যে গণতন্ত্রের বিধিলিপি আছে, তাতে সেসব বন্দোবস্ত করা যাতে এ দেশের দুঃখী মানুষ রক্ষা পায়, শোষকেরা যাতে রক্ষা পায় তার ব্যবস্থা নাই। সেজন্য আমাদের গণতন্ত্রের সঙ্গে অন্যের পার্থক্য আছে। শোষিতকে রক্ষা করার জন্য এই গণতন্ত্র ব্যবহার করা হবে।”আমাদের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে গণতন্ত্র এবং স্বৈরশাসনের অবসান। সংবিধানের ১১ নং অনুচ্ছেদে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে যে, ‘প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে; মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থা হবে গণতান্ত্রিক। প্রাপ্তবয়স্কদের সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নাগরিকগণ । রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে পারবে। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূর করাই হবে গণতন্ত্রের লক্ষ্য। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন ব্যবস্থার একটি পরিপূর্ণ রূপ নির্দেশ করবে। গণতন্ত্র শুধু শাসনব্যবস্থার রূপ নির্দেশ করবে না, সামাজিক আদর্শ হিসেবেও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। রাষ্ট্র পরিচালনার সকল স্তরে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
* ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা সংবিধানের অন্যতম মূল আদর্শ বা নীতি ধর্মনিরপেক্ষতা। আমাদের সংবিধানের ১২নং অনুচ্ছেদে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা যাবে না। প্রত্যেক নাগরিক তার নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ধর্ম পালন, চর্চা ও প্রচার করতে পারবে। কোনো বিশেষ ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ কোন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া বা তার প্রতি কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না। সমাজজীবন হতে সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা হবে রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য।ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ধর্মহীনতা নয়। তাই ৭২-এর সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের ব্যবহার, কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার উপর উৎপীড়ন করা হবে না।’
১৯৭২ সালের ৭ জুন রেসকোর্স ময়দানে ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান মুসলমানের ধর্ম পালন করবে। হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে। খ্রিষ্টান তার ধর্ম পালন করবে। বৌদ্ধও তার নিজের ধর্ম পালন করবে। এই মাটিতে ধর্মহীনতা নাই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। এর একটা মানে আছে। এখানে ধর্মের নামে ব্যবসা চলবে না। ধর্মের নামে মানুষকে লুট করে খাওয়া চলবে না। ধর্মের নামে রাজনীতি করে রাজাকার, আল-বদর পয়দা করা বাংলার বুকে আর চলবে না। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।’
অসাম্প্রদায়িকতাকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। তাতে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্ম-কর্ম করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে। তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রের নাই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কারো বাধা দেওয়ার মতো ক্ষমতা নাই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে। তাদের বাধা দিতে পারবে না।
আমাদের শুধু আপত্তি হলো, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। ২৫ বছর আমরা দেখেছি ধর্মের নামে জোচ্চরি, ধর্মের নামে বেঈমানি, ধর্মের নামে অত্যাচার, খুন, ব্যাভিচার বাংলাদেশের মাটিতে চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন