বঙ্গবন্ধু হত্যায় ষড়যন্ত্র উদঘাটনে ‘হচ্ছে’ কমিশন
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ৩৫ বছর পর পাঁচ খুনি ফাঁসির দড়িতে ঝুলে তাদের সাজা পেয়েছেন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১২ জনের মধ্যে বাকিদের একজন বিদেশে পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন, আর ছয় জনকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে এই বিচারে একটি বিষয় উঠে আসেনি। সেটি হলো, এই হত্যার পেছনের রাজনৈতিক চক্রান্ত।
বিচারে প্রাধান্য পেয়েছে যারা সরাসরি এই হত্যাযজ্ঞে সরাসরি অংশ নিয়েছিল তাদের বিষয়টি। তবে একটি জাতির প্রতিষ্ঠাতাকে হত্যা কোনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে বা হঠকারী কোনো গোষ্ঠীর কাজ হতে পারে না। এর পেছনে দেশি-বিদেশি যে চক্রান্ত ছিল, সেটি উঠে আসেনি এই মামলায়।
বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলন আর যাকে নেতা মেনে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে সেই বঙ্গবন্ধুকে তারই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে জীবন দিতে হয়েছে নির্মমতার শিকার হয়ে। তার সঙ্গেই খুন হয়েছে তার স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূরা। দুই মেয়ে শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা বেঁচে গেছেন তারা বিদেশে থাকায়। আর বাবার স্বপ্নের দেশ নির্মাণের প্রত্যয় জানিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তার বড় মেয়ে। আর পিতা হত্যার বিচারও হয়েছে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনাকে নিছক কোনো হত্যা হিসেবে ভাবলে তার পুরো চিত্রটি পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আপিল বিভাগে রায় দেয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনাহ ২০১৭ সালের ১৫ আগস্টের এক শোক সভায় এই ষড়যন্ত্র উদঘাটন না হওয়ায় আক্ষেপের কথা বলেছেন।
ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ বলে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ১৯৭৫ সালের আগে থেকেই নানা চেষ্টা হয়েছে। সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তিও জড়িত ছিল এতে। হত্যার পর নানা ঘটনাপ্রবাহেও এই চিত্র স্পষ্ট।
হত্যার বিচার করা যাবে না, এমন একটি বিধান সংবিধানে সংযোজন করা দুই দশক। আর খুনিদেরকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান পুরস্কৃত করেছেন বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে।
আবার মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগীদের রহিত করা রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী করা হয় স্বাধীনতাবিরোধীদের। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের চার মূল নীতিও সংবিধানে অক্ষত রাখা হয়নি।
উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বদলে ১৬ বছরের সামরিক শাসন জেঁকে বসে বাংলাদেশে। গতি স্লথ হয় উন্নয়নেরও। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিরামহীনভাবে চলে অপপ্রচার, পরে যার সবই মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে জাতির জনককে দেশবাসীর কাছে খলনায়ক করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই বিষয়গুলোও আসেনি বিচারে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার দিন ১৫ আগস্ট এলেই এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা আসে। বুধবার দেশজুড়ে জাতির জনককে স্মরণ করা হবে। তাকে হারিয়ে বাংলাদেশের কত ক্ষতি হয়েছে, সেটি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে কার, কার জন্য জাতির জনককে হারাতে হলো, সেই বিষয়টি অজানাই থেকে যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪৩ বছর পর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উদঘাটনে উদ্যোগী হওয়ার কথা ভাবছে সরকার। এ বিষয়ে ‘কমিশন’ গঠন করার বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে ভাবছে তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেন, ‘যেহেতু দাবি উঠেছে, যেহেতু সবাই চাচ্ছে, সেহেতু আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী বলেন, ‘এটি শুধু মহান একজন ব্যক্তিকে হত্যা নয়, এর পেছনে ছিলো দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক চালচিত্র। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটনা নয়, এর পেছনে অনেক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ-বিপক্ষ ঘটনা রয়েছে। যদি একটি কমিশন গঠন হয় তাহলে সেটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত হবে এবং জাতির কাছে বিষয়টি ইতিহাস উপযোগী হবে বলে মনে হয়।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছি। কিন্তু হত্যার পেছনে যে ষড়যন্ত্র তা এখনো বের হয়নি। এই ষড়যন্ত্র উদঘাটনের জন্য একটি কমিশন গঠন করা দরকার। এ দাবিটি আমরা বরাবরই করে এসেছি।’
আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘এটা একটা জুডিশিয়াল কমিশন গঠিত হতে পারে। প্রকৃত ঘটনার পূর্বাপর উদঘাটনে এই কমিশন কাজ করতে পারে। এই ঘটনায় দূর থেকে জড়িতদেরও ফৌজদারি আইনে বিচারে মুখোমুখি করার সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনে সম্পূরক চার্জশিট দিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের নতুন করে বিচার করতেও আইনে কোনো বাধা নেই।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন