বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের ২২ লাখ টাকা দিলো তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা

রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ২২ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন।

রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া মার্কেটস্থলে তাদের পক্ষ থেকে মোট ২০ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়।
এছাড়া একই দিন সকালে এককভাবে তৃতীয় লিঙ্গের একজন ক্ষতিগ্রস্তদের ২ লাখ টাকা দেন। সবমিলিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের

মানুষরা ক্ষতিগ্রস্তদের ২২ লাখ টাকা দিয়ে সহায়তা করলেন।

এ দিন অর্থ সহায়তা প্রদানকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের। এ সময় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এই অনুদান হস্তান্তরকালে ঢাকাসহ আশপাশের গুরুমারাও বঙ্গবাজারে আসেন। সেই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ।

বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির দিপালী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলেছি গত ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে। এমন একটি দুর্ঘটনায়, তাদের এই বিপদের সময় আমরা আমাদের ঈদের কেনাকাটা না করে এই ব্যবসায়ী ভাইদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। এটাই ভালো লাগছে। সারাদেশ থেকে ২০ লাখ টাকা আমরা তুলেছি। সেই টাকা আজ তাদের কাছে দিতে এসেছি। তারা বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকব।

তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের গুরুমা রাখি শেখ বলেন, আমরা মানুষের কাছ থেকে এক-দুই টাকা করে উঠিয়ে উঠিয়ে এই টাকা জমিয়েছি। এখন আমরা সেটা মানবতার কল্যাণেই দিয়ে দেব। এই টাকা কোনো ব্যবসায়ীর হাতে হাতে দেওয়া হবে না; পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা তহবিলে জমা দেওয়া হবে। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে হাতে এই টাকা পৌঁছানো হবে।

এর আগে রোববার সকালে রাজধানীর উত্তরা এলাকার তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের সর্দারনি আলেয়া হজের জন্য জমানো টাকা থেকে ২ লাখ টাকা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের অনুদান হিসেবে দেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দুর্দশা দেখে এবার হজ না করেই সেই ২ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে তিনি ব্যবসায়ীদের দিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

অনুদান প্রদানকালে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি এই মার্কেট পুড়ে যাওয়া দেখে। একসময় আমরাও এই ব্যবসায়ীদের থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা সাহায্য নিয়েছি। কিন্তু আজ সেই ব্যবসায়ীরা সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছে। তাই আমি আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এ সামান্য সহযোগিতা করেছি। আমি দেশবাসীকে অনুরোধ জানাব- তাদের এই বিপদের সময় পাশে দাঁড়ান। প্রধানমন্ত্রীকে বলব- শুধু আপনি একা পারবেন না। সবাইকে নিয়ে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আজ হাতে পাওয়া টাকার মধ্যে সবচেয়ে আনন্দদায়ক হলো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা টাকা দিয়েছেন। এটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এ কারণে আমরা ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধ করব, তাদের যেন কখনও অবহেলার চোখে না দেখেন। এখন থেকে আমরা তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখব।

এর আগে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যের দুই লাখ অনুদানের টাকা হাতে পেয়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোহন মিয়া বলেন, আমাদের এই বিপদের সময় তিনি পাশে দাঁড়িয়েছেন, এরজন্য তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। তিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে অনেক বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। এই মুহূর্তে যেকারও সামান্য সহযোগিতাও আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া।