বঙ্গোপসাগরেই বাস এই নগ্ন জাতির (ভিডিও)

সভ্যতার খুব কাছে থেকেও যারা এখনো আদিম রয়ে গেছে, তাদের মধ্যে জারোয়ারা অন্যতম। এখানো তারা সেই প্রস্তর যুগের মানুষের মত নগ্ন হয়ে থাকে। পাথরে ঘর্ষণ করে আগুন ধরায়, আর জঙ্গলে পশু শিকার করেই তাদের জীবন পার। এই নগ্ন আদিম জাতি আমাদের প্রতিবেশি; ভারতের আন্দামান নিকাবোর দ্বীপপুঞ্জে তাদের বসবাস।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এই অঞ্চলটির পূর্বে আন্দামান সাগর ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। ভৌগোলিকভাবে অঞ্চলটিকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অংশ মনে করা হয়।

এর রাজধানী আন্দামানের শহর পোর্ট ব্লেয়ার। ২০০১ সালের ভারতের আদমসুমারি অনুসারে, এই অঞ্চলের জনসংখ্যা ৩৫৬,১৫২ যা এখন অনেক বেড়েছে। এই অঞ্চলের স্থলভাগের সামগ্রিক আয়তন ৬,৪৯৬ বর্গকিলোমিটার। এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি কলকাতা হাইকোর্টের অধিকারক্ষেত্রের অন্তর্গত।

এই অঞ্চলের আর অপর নাম হলো- কালাপানির দেশ, দ্বীপান্তরের দেশ আর আদিমতম মানুষের দেশ।

হাজার হাজার বছর আগে এই আন্দামানে এসেছিল একদল মানুষ। প্রথমে মনে করা হতো এরা দক্ষিণ এশিয়া থেকে এসেছে। কিন্তু পরে জানা যায় আসলে এদের অধিকাংশ আফ্রিকা থেকে আসা। তাই আদিবাসী এই মানুষগুলোর মধ্যে নিগ্রো প্রভাব স্পষ্ট। তবে একাংশের মধ্যে রয়েছে মঙ্গোলয়েড প্রভাব।

আন্দামানের এই আদিবাসিন্দারাই পৃথিবীর আদিমতম অধিবাসী। জারোয়া, ওঙ্গি, সেন্টিনেলিজ, শম্পেন, গ্রেট আন্দামানিজ ও নিকোবরিজ, এই কটি উপজাতির বাস এই আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। সভ্যতা থেকে যোজন যোজন দূরে গভীর জঙ্গলে এদের বাস। আজো এরা নগ্ন থাকে।

এদের ভাষা এবং সংস্কৃতি একান্তই নিজস্ব। সভ্য সমাজের মানুষকে এরা সহ্য করতে পারে না। মধ্য ও দক্ষিণ আন্দামান ও আরো কয়েকটি দ্বীপে নির্জনতায় এদের বসবাস। এক সময় সংখ্যায় এরা কয়েক হাজার থাকলেও আজ সব মিলিয়ে সংখ্যায় এরা হাজারেরও কম। এদের মধ্যে আবার গ্রেট আন্দানিজদের সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনের কাছাকাছি। আদিমতম এই মানুষগুলোকে রক্ষা করাই এখন প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে।

সেক্ষেত্রে ভারত সরকারের কিছু সিদ্ধান্তই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ‘হিউমেন সফারি’ নামক সংরক্ষিত এলাকা করা। আন্দামানে পর্যটকদের নাকি বিজ্ঞাপন দিয়ে এই ‘হিউমেন সফারি’তে নিয়ে যাওয়া হয়। আসলে জঙ্গলে বন্যপ্রাণী দেখার চেষ্টা থাকে, এক্ষেত্রে প্রাণী নয়, সভ্যতার আলো থেকে যোজন দূরে থাকা বিশ্বের আদিমতম নগ্ন মানুষগুলিকে দেখার আকাঙ্ক্ষা থাকে বলেই একে বলা হচ্ছে হিউমেন সফারি।

বিদেশি পর্যটকরাইে এ ব্যাপারে আগ্রহী বেশি। কয়েক বছর আগে ব্রিটেন থেকে প্রচারিত দ্য গার্ডিয়ানের একটি ফুটেজে দেখানো হয়েছে বিদেশি পর্যটকদের সামনে এক জারোয়া যুবতীকে নাচতে বাধ্য করা হচ্ছে। এরপরই প্রবল বিতর্কের ঝড় ওঠে।

পর্যটকদের এই আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে আন্দামান প্রশাসনের তৈরি একটি সিদ্ধান্ত। বিতর্ক সত্ত্বেও প্রশাসন জারোয়াদের সংরক্ষিত অঞ্চল ফুঁড়ে নিয়ে গিয়েছে আন্দামান ট্রাঙ্ক রোড নামের হাইওয়েকে। সড়ক পথে দক্ষিণ আন্দামান থেকে মধ্য হয়ে উত্তর আন্দামানে যাওয়ার এই হাইওয়ের ফলে জারোয়ারা অনেকটাই খোলাস হয়ে পড়েছে। ফলে তারা মাঝে মধ্যেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে চলে আসছে হাইওয়ের উপরে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সভ্য মানুষের স্পর্শ পেয়ে তাদের চাহিদাও বেড়েছে নানা কিছুর।

সাউথএশিয়া মনিটরের এক প্রতিবেদক জারোয়াদের জীবন ধারণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করতে সেখানে গিয়েছিল তিনি লিখেছেন, ‘সেখানে একটি জারোয়া পরিবার দেখা পায়। স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান। সকলেই নগ্ন। নারীর উর্দ্ধাঙ্গে কোনো কিছু নেই। নীচে লজ্জা নিবারণের জন্য সামান্য কিছু লতা-পাতা। তবে গলায় সামুদ্রিক জিনিষ দিয়ে তৈরি হার। পুরুষটির হাতে তীর, ধনুক।’

আসলে একুশ শতকে পৌঁছেও আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের আদি বাসিন্দা জারোয়া, সম্পেন, ওঙ্গি, সেন্টিনেল প্রভৃতি উপজাতির মানুষরা সভ্যতাকে বরণ করে নেয়নি। বরং সভ্য মানুষকে ঘৃণাই করে। জঙ্গলে তাদের বাসস্থান। আর নগ্নতাই আশ্রয়। হাতে লড়াইয়ের অস্ত্র তীর ধনুক। খাবার বলতে ফলমূল, বুনো শূয়র আর সামুদ্রিক মাছ।

আন্দামানের এই আদি মানবগুলোর ধর্ম-সংস্কার সম্বন্ধে খুব ভালো না জানা গেলেও এতটুকুন জানা যায় যে তারা এক ইশ্বরবাদী। সাগর থেকে মাছ ধরা ও বন্য প্রাণী শিকার করে আগুনে পুড়ে খায় এরা।

কিছু দিন আগেও তারা এতই হিংস্র ছিল যে সভ্য জগতের কেউই তাদের কাছে যেতে পারতো না। তাদের কাছে যাওয়ার চেষ্টাকারী এ পর্যন্ত ২জনকে হত্যা করেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের চেষ্টায় এখন তারা কিছুটা সহনিয় হয়ে উঠেছে।

আদিবাসীন্দারা ছাড়াও আন্দামানে এখন বাঙালি, তামিল ও অন্যান্য আরো অনেক জাতির মানুষ বসবাস করেন। আসলে এক সময় ব্রিটিশরা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেয়ার অপরাধে যাদের নির্বাসনে পাঠিয়েছিল আন্দামানে তাদের বংশধররা রয়ে গিয়েছেন এই দ্বীপে।

আর দেশভাগের সময় অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মানুষদের ভারত সরকার পুনর্বাসন দিয়ে পাঠিয়েছিল এখানকার নানা দ্বীপে। তারাই সংখ্যায় এখন বেশি। আন্দামানের নানা প্রান্তে এখন ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা, যশোরের মানুষের বসবাস। কয়েকটি জায়গায় তো ৯০ শতাংশের বেশিই বাংলাদেশি।

আদিবাসীন্দারা ছাড়াও আন্দামানে এখন বাঙালি, তামিল ও অন্যান্য আরো অনেক জাতির মানুষ বসবাস করেন। আসলে এক সময় ব্রিটিশরা স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেবার অপরাধে যাদের দ্বীপান্তর দিয়ে পাঠিয়েছিল আন্দামানে তাদের বংশধররা রয়ে গিয়েছেন এই দ্বীপে। আর পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের ভারত সরকার পুনর্বাসন দিয়ে পাঠিয়েছিল এখানকার নানা দ্বীপে। তারাই সংখ্যায় এখন বেশি। আন্দামানের নানা প্রান্তে এখন ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা, যশোরের মানুষের বসবাস। কয়েকটি জায়গায় তো ৯০ শতাংশের বেশিই বাংলাদেশি।

https://youtu.be/9pu62tzQ990