বছর ঘুরতেই আবার বাড়বে গ্যাসের দাম
গত আট বছরে দেশে গ্যাসের দাম বেড়েছে গড়ে দ্বিগুণের বেশি। কিন্তু কোনো শ্রেণির গ্রাহকই চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছে না। তার ওপর বছর ঘুরতেই আবার বাড়বে গ্যাসের দাম।
আগামী বছরের মধ্যভাগে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হলে উৎপাদন ও সরবরাহ মূল্য বেড়ে যাবে। এতে গ্রাহক পর্যায়েও দাম বাড়বে গ্যাসের। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও সে কথাই উল্লেখ করেন।
২০০৯ সালের ১ আগস্ট থেকে এ বছরের ১ জুন পর্যন্ত গ্রাহক শ্রেণিভেদে গ্যাসের দাম বেড়েছে ২২১ শতাংশ পর্যন্ত। অবশ্য এই দামের মধ্যে একটা বড় অংশ (প্রায় ১২২ শতাংশ) সরকারের নানাবিধ শুল্ক ও কর।
তবে এসব শুল্ক ও করের হার কমিয়ে দিলে মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় রাখা সম্ভব হবে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সূত্র দাবি করেছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম কয়েক বছর ধরে কম থাকায় এবং অদূর ভবিষ্যতে বাড়ার সম্ভাবনাও কম থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মনে করে ওই সূত্র।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এলএনজি তো আমদানি করতেই হবে। তাতে গ্যাসের সরবরাহ মূল্য অনেকটাই বাড়বে। কিন্তু এই মূল্যবৃদ্ধি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এখনো সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিত্র উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে দেশে প্রতি ইউনিট (১ হাজার ঘনফুট) গ্যাসের গড় দাম প্রায় সাত টাকা। আগামী বছরের মধ্যভাগে এলএনজি থেকে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নেওয়া শুরু হলে এই দাম বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ হবে। এরপর আগামী বছরের শেষ ভাগে বেসরকারি খাতের সামিট গ্রুপের আমদানি করা এলএনজি থেকে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হলে গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ মূল্য আরও বাড়বে।
উপস্থাপনায় বলা হয়, বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গ্যাস খাত থেকে প্রায় ১২২ শতাংশ নানাবিধ শুল্ক ও কর নেয়। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর, ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর এবং অবশিষ্ট অংশ গ্যাস উত্তোলন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
এলএনজি আমদানি শুরুর পরও এনবিআর এই খাত থেকে একই হারে শুল্ক ও কর সংগ্রহ করলে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২০ টাকা পর্যন্ত পড়তে পারে। ওই দামের গ্যাস ব্যবহার করে শিল্প, সার, বিদ্যুৎসহ কোনো উৎপাদন খাতই টিকে থাকতে পারবে না। ফলে জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে এনবিআর শুল্ক ও কর না নিলে উৎপাদন খাত থেকে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি যুক্ত হবে।
গ্যাস খাত থেকে এনবিআরের আহরিত শুল্ক ও করের হার কমিয়ে দিয়েও গ্যাসের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রিত রাখা যেতে পারে বলেও উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম বর্তমানের ৭ টাকার পরিবর্তে হয়তো ১২ টাকা পড়বে। এই বাড়তি মূল্য গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়িয়ে সমন্বয় করতে হবে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণে কর্মরত কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, সরকার বেশি করে রাজস্ব আহরণের কৌশল হিসেবে জ্বালানির দাম বাড়ানোর যে পথে অগ্রগসর হচ্ছে, তাতে আর্থিক ঘাটতি মিটবে না। জ্বালানির ঘাটতিও অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে যা করলে সুফল পাওয়া সম্ভব, তা হলো জ্বালানি মিশ্রণের অনুপাত হিসাব করে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য কোন জ্বালানি কতটা ব্যবহার করলে আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায়, তা নির্ধারণ করতে হবে।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, এ ছাড়া গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল, ‘শর্টফল সাপোর্ট ফান্ড’ প্রভৃতির অর্থ জ্বালানি খাতে ব্যবহারে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে হবে। এগুলো তো জ্বালানি খাতের উন্নয়নের জন্য দেওয়া গ্রাহক-ভোক্তাদেরই টাকা। এই টাকা যত বেশি শুল্কমুক্ত ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে, ততই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। দাম বাড়ানোর প্রয়োজন কমবে।প্রতিবেদন প্রথম আলো’র সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন