রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা প্রদর্শন : জনসাধারণের চরম ভোগান্তি
দেশের অন্যতম প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি। রাজধানীতে প্রধান এই দুই দলই সমাবেশ করেছে। রক্ত দিয়ে হলেও আওয়ামীলীগ সরকারের অধীন নির্বাচন হতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
তাঁরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেই কেবল নির্বাচন হবে। বিএনপির সমাবেশ থেকে সরকার পতনের লক্ষ্যে চলমান বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের নতুন রূপরেখা ‘একদফা’ ঘোষণা করেছে দলটি। সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে ‘এক দফা’ ঘোষণা করেছে বিএনপি।
বুধবার (১২ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এই এক দফার ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যদিকে আওয়ামী করেছে শান্তি সমাবেশ। আওয়ামীলীগের নেতারা বলেছেন, যথাসময়ে সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং বর্তমান সরকারের অধীনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসলে ভালো, আর নির্বাচনে না আসলে আরও ভালো। এদিন রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বিএনপির এক দফা বেলুনের মতো ফুটে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, তারা বার বার এক দফা দেয়। ১৩, ১৪, ১৯ এবং ২২ সালের ডিসেম্বরে এক দফা দিয়েছে। তাদের এক দফা বেলুনের মতো ফুটে যায়। এক দফার আন্দোলন মাঠে মারা গিয়েছিল। এবারও তাদের এক দফা ফুটে যাবে।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা অুনযায়ী বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের প্রধান সড়কে। অন্যদিকে বায়তুল মোকারমের দক্ষিণ দিকের সড়কে আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। প্রধান দুই দলের এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে এই দুই সমাবেশ স্থলে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েনও করা হয়। ফলে এই দুই প্রধান সড়কে দুপুর থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সড়কগুলোতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পল্টন, মতিঝিল, বিজয়নগর পানির ট্যাংকি, প্রেসক্লাব, শাহবাগ অঞ্চলে যাতায়াতরত জনসাধারণের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
গণমাধ্যম সূত্র জানা যায়, দুপুরের আগেই নেতা-কর্মীতে পূর্ণ বিএনপির সমাবেশস্থল। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণায় বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকার নয়াপল্টনে সকাল থেকেই জড়ো হতে শুরু করে দলটির নেতা-কর্মীরা। সমাবেশ বেলা আড়াইটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টার মধ্যেই বিএনপির নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে ভরে যায় সমাবেশস্থল। ফলে বিজয়নগর পানি ট্যাংকি এলাকা থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের দুই পাশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় নেতা-কর্মীদের জমায়েতের কারণে।
সমাবেশে অংশ নেওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকে জানান, ভোর থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা ও বিভিন্ন জেলা থেকে দলের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতা-কর্মীদের জমায়েত বড় হতে শুরু করে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের অনেকে মধ্যরাতে রওনা দিয়ে সমাবেশে হাজির হয়েছেন। নেত্রকোনা সদর থেকে ভোর চারটায় রওনা হয়েছিলেন স্বপন শেখ। তিনি গাজীপুর পর্যন্ত বাসে আসেন। এরপর ট্রেনে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছান। বাস না পেয়ে কমলাপুর থেকে হেঁটে আসেন সমাবেশস্থলে। নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্য স্বপন অবশ্য বলেন, জায়গায় জায়গায় পুলিশ দেখেছেন তিনি। তবে কেউ তাঁকে বাধা দেয়নি।
অন্যদিকে আজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ স্থল জনতার মহাসমুদ্রে পরিণত হয়। বিএনপি ও জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাগ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আয়োজিত এই শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ দিকের সড়কে বেলা আড়াইটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের সমাবেশ শুরু করে আওয়ামী লীগ। বিকেল সাড়ে চারটার দিকেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে দেখা যায়। বেলা যত বাড়তে থাকে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিও ততই বাড়তে থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি এই সমাবেশে কেরানীগঞ্জে, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী এই সমাবেশে অংশ নেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বায়তুল মোকাররমে জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটক সংলগ্ন সভা মঞ্চ তৈরি করা হয়। মঞ্চ থেকে পশ্চিম দিকে জিরো পয়েন্ট হয়ে সচিবালয়ের প্রধান ফটক পর্যন্ত দুই দিকের সড়কে হাজারো নেতা-কর্মী অবস্থান নেন। অন্যদিকে সভামঞ্চ থেকে গুলিস্তানের কাজী বশীর উদ্দিন মিলনায়তন (মহানগর নাট্যমঞ্চ) পর্যন্ত দুই পাশের সড়কে নেতা-কর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে যায়। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ লাগোয়া পশ্চিম পাশের সড়কেও নেতা-কর্মীরা অবস্থান দেখা যায়। জিরো পয়েন্ট থেকে পুরানা পল্টন অভিমুখী সড়কেও ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা।
দুই দলের এই সমাবেশের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। বুধবার (১২ জুলাই) দুপুরে কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, শেরাটন হোটেল সংলগ্ন ভিআইপি রোড, কাকরাইল মোড়ে সিগন্যাল জ্যামে দীর্ঘক্ষণ ব্যক্তিগত গাড়ি, সিনএজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, বাস আটকে দেখা যায়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে পায়ে হেঁটে নিজ নিজ দলের কর্মসূচিতে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। বাস, ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল থেকে নেমে পথচারীদেরও হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
দুই দলের সমাবেশের কারণে রাজধানীর সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল তুলনামূলক কম দেখা গেছে। যানজট বেশি হওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই অনেক বাস ঘুরে ফিরে যায়। সমাবেশের কারণে বিভিন্ন সরকারি অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখেও চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশকে তল্লাশি করতে দেখা গেছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন