বনানীর আগুন: স্বামীর সাথে চলে গেলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীও
রাজধানী ঢাকার বনানীতে এফআর টাওয়ারে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার আগে দু’বার বাড়িতে যোগাযোগ করেছিলেন নীলফামারীর জলঢাকার মেয়ে রুমকি আক্তার ওরফে রুমকি রহমান(২৯)।
বাবা আশরাফ হোসেনের সাথে কথা হয় তার। আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর দুপুর ১টার দিকে বাবাকে ফোন করেন রুমকি।
শুক্রবার দুপুরে জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের চেংমারী বিন্নাকুড়ি এলাকার আদর্শপাড়ায় বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের আহাজারি। চলছে শোকের মাতম।
জলঢাকা বিন্নাকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, জলঢাকা রাবেয়া কলেজ থেকে এইচএসসি, রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে অনার্স এবং ঢাকা ইডেন কলেজে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে রুমকি।
মাস্টার্সে পড়াকালীন ট্রাভেলস কোম্পানি মাইলস্টোনে চাকরি করছিলেন তিনি। এরই মধ্যে একই কোম্পানিতে চাকরিরত ঢাকা গেন্ডারিয়া থানার আলমগঞ্জ ইউনিয়নের মৃত. মিজানুর রহমানের ছেলে মাকছুদার রহমানের (৩২) সাথে পরিচয়ের পর জড়িয়ে পড়েন প্রেমে। গেল তিন বছর আগে প্রস্তাবের মাধ্যমে পারিবারিক সম্মতি বিয়ে হয় তাদের।
চাচাতো বোন সাজেদা আখতার জানান, গেল ১৫ মার্চ ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলো সে। এটিই ছিলো তার সর্বশেষ আসা।
বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর বাবা আশরাফ হোসেনের সাথে দু’ দফায় ফোন করে কথা বলেন রুমকি। প্রথমবার অফিস বিল্ডিংএ আগুন লাগার পরে দুপুর ১টার দিকে আগুনের ধোয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে জানান। বাঁচবো কিনা জানিয়ে দোয়া করতে বলেন।
তিনি বলেন, চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো রুমকি। গেন্ডারিয়ায় স্বামীর বাড়ি মেরামত কাজ চলায় একই এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে থাকতো তারা।
মেঝভাই রফিকুল ইসলাম জানান, মাস্টার্সে পড়াকালীন ওই ট্রাভেলস কোম্পানিতে চাকরি নেয় সে। কোম্পানির মতিঝিল অফিসে কাজ করতো তখন থেকে।
৩/৪ দিন আগে মতিঝিলের অফিস মেরামত কাজ করায় তাকে বনানী অফিসে স্থানান্তর করে। সেখানে স্বামী মকছুদারও চাকরি করছিলেন। এরই মধ্যে আগুনের ঘটনায় মারা গেলো দু’জনই।
ভগ্নিপতি আতিকুজ্জামান আতিক জানান, রাত পৌনে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রুমকির মরদেহ শনাক্ত করে আরেক চাচাতো বোন শাহনাজ আখতার।
শুক্রবার দুপুরে নিয়ে আসা হয় রুমকির মৃতদেহ।
এদিকে জুমার নামাজের পর জানাযা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় রুমকিকে।
রুমকির চাচা নীলফামারী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জলঢাকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী জানান, ছয় মাস আগে মারা যায় রুমকির মা রিনা বেগম। ছয় মাসের মাথায় হারিয়ে গেলো মে এবং জামাই।
বুকটা যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে এই খবরগুলো বলতে। আল্লাহ ওদের জান্নাতবাসী করুক।
তিনি জানান, জামাতা মকছুদারের মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গেন্ডারিয়ায় নিজ বাড়িতে। সেখানে দাফন করা হয়েছে জুমার নামাজের পর।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন