বন্দরে হারিয়েছেন পৈত্রিক ভিটামাটি, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাকা ভবনে এখন সুখের বসবাস

২০১৩ সালে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে সরকার। ফলে বন্দর নির্মাণের লক্ষে অধিগ্রহণ করা হয় সাড়ে ৬ হাজার একর জমি। আর এই ভুমি অধিগ্রহনে পৈত্রিক ভিটামাটিসহ প্রিয় আবাস্থল হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হন হাজারো মানুষ।

তবে জন্মভুমিহারা মানুষের জন্য পুনর্বাসন ও শান্তির নিবাস গড়ে দেয়ার লক্ষে দৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় ৪৮৪ একর ভূমিতে ৩ হাজার ৪২৩ টি বাড়ি নির্মাণের লক্ষে শুরু হয় পুনর্বাসন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। যা দ্রুত বাস্তবায়নে অগ্রগতির মধ্যেদিয়ে নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করেছে বন্দর কতৃপক্ষ।

তবে ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ দুই হাজার ১১ টি পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে শান্তির নিবাস। আর হস্তান্তরিত ভবনে বসবাসরত মানুষের দিন কাটছে এখন সুখের নিড়ে। ফলে প্রধানমন্ত্রীকে প্রাণখুলে সাধুবাদ জানাচ্ছেন পুনর্বাসন প্রকল্পের সুবিধাভোগী বাসিন্দারা।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দরে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য তৈরী করা হয়েছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত পাকা ঘর। যার প্রতিটি ঘরে রয়েছে তিনটি বেডরুম, ডাইনিং-ড্রইং, কিচেন ও দুটি বাথরুম। ইতোমধ্যে এসব ঘর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে বন্দর কতৃপক্ষ বলছে, ভুমি অধিগ্রহনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য নির্মানাধীন আরো ৯ শত পাকা ঘর হস্তান্তর করা হবে চলতি বছরের জুনের মধ্যেই।

আর হস্তান্তরের অপেক্ষায় এসব ভবনগুলো শেষ সময়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে রংতুলির আচরে। তবে পূর্বে হস্তান্তরিত ভবনে বসবাসরত পরিবারগুলো সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছে। তাদের আবাস্থলের সামনেই অনেকে গড়ে তুলেছেন সবজির বাগান, আবার অনেকে হাঁস, মুরগি পালন করে হচ্ছেন সাবলম্বী। এমনকি আবাসন প্রকল্পের স্কুলে লেখাপড়া করছেন তাদের সন্তানেরা। একই সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ, খেলার মাঠ, মসজিদ নির্মাণ ও চারদিকে পাকা সড়কসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় হাসিখুসিতে দিন কাটাচ্ছে নির্মিত পল্লীর বাসিন্দারা।

লালুয়া আবাসন প্রকল্পের ৩ নং প্যাকেজের বাসিন্দা গোলেনুর বেগম জানান, বন্দরের জন্য জমি নেয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম। কারন সেখানে আমার স্বজনদের কবর ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা পাকা ভবন দিয়েছে থাকার জন্য। এখন খুবই শান্তিতে আছি,কারণ নিজ জন্মভুমির এলাকাতে বসবাস করছি পাকা ভবনে। এখানেও নিজ বাড়ির মত সবকিছু লালন-পালন করতে পারছি।

একই প্যাকেজের বাসিন্দা আউয়াল হাওলাদার বলেন, আগে টিনের ঘর ছিল আমার। কিন্তু জমি নিলেও সরকার পাকা বিল্ডিং দিয়েছে। এখন ভালো আছি এখানে কোন সমস্যা নেই। স্কুল,মসজিদ, পাকা রাস্তাসহ সবকিছুই আছে। তবে বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকুপ স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন তারা। এদিকে ঘর পাওয়ার অপেক্ষায় মুখিয়ে আছেন দুলাল বয়াতী, রিজু প্যাদা, ইউসুফ আলীসহ শতাধিক বাসিন্দরা। কিছু দিনের মধ্যেই ঘর হস্তান্তরের পর মহল্লাপাড়া ১১,১২ এবং ১৩ নং আবাসন প্রকল্পের ভবনে উঠবেন তারা। তাই মাহিন্দ্রক্ষণের প্রহর গুনছেন তারা। পায়রা বন্দর (কর্তৃপক্ষ) চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল সোহায়েল আহম্মেদ জানান, প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের খোঁজখবর নিয়ে থাকেন।

ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন প্রকল্পের প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যেই সব পাকা ঘর হস্তান্তর করা হবে। আমরা সেই লক্ষে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি।