বন্দুকধারীকে জাপটে ধরে ‘হিরো’ হলেন কলকাতার আজহারউদ্দিন
সিনেমা কিংবা নাটকের ঘটনাকেও হার মানিয়েছে ভারতের কলকাতায় একটি স্কুলে ঘটে যাওয়া রুদ্ধশ্বাস ঘটনা। নিশ্চিত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। কিন্তু এক পুলিশ সদস্যের দুঃসাহসিক অভিযানে রক্ষা পায় স্কুল শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনার পর সবাই যখন আজহারউদ্দিনের প্রশংসা করছেন তখন তিনি বিনয়ের সঙ্গে বলছেন আমি তো আমার কর্তব্য পালন করেছি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার জন্য গর্ব করেছেন।
জানা যায়, অন্যদিকগুলোর মতই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় নিজের অফিসে কাজে ব্যস্ত ছিলেন মালদহের পুলিশ কর্মকর্তা (ডিএসপি) আজহারউদ্দিন খান। মাঝে ফোন আসছে সেটাও দিকে খেয়ার রাখছেন। পুলিশ অফিসে তো আর এমনি এমনি কেউ ফোন করে না। এমনটি একটি ফোন কল বেজে উঠলো।
হঠাৎ বুধবার দুপুরে খবর আসে রাজ্যের মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে এক সন্ত্রাসী বন্দুক নিয়ে ঢুকে পড়েছে। তিনি এই খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই চলে যান ঘটনাস্থলে। অন্য পুলিশ সদস্যরা তখন স্কুলটি ঘিরে ফেলেছে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। কি হয়, কি হয়। এমন আশঙ্কা সবার মনে। স্কুলের বাচ্চাদের কি হবে।
কিন্তু কেউই সহাস করে এগিয়ে যেতে পারছেন না। পুলিশ দেখলেই রেগে যাচ্ছে বন্দুকধারী দেব বল্লভ। এমন সময় সবাইকে অবাক করে দিয়ে আচমকা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্দুকধারীর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন পুলিশ কর্মকর্তা আজহারউদ্দিন। আর এই ঘটনায় তিনি বনে যান কলকাতার হিরো।
তিনি কৌশলে সন্ত্রাসীর বন্দুকধরা হাতটাকে ওপরে করে দিলেও কম শক্তি দেখায়নি সেই বন্দুকধারী। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অন্য পুলিশসদস্যরাও আজহার উদ্দিনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। আর সমাপ্ত হয় একটি চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির।
এই গোটা ঘটনার কথা জানার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘পুলিশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ভালো কাজ করেছে। যে কৃতিত্বের অনেকটাই প্রাপ্য আজহারউদ্দিনের।’
আজহারউদ্দিন হাতে সামান্য আঘাত পেলেও বন্দুকবাজকে ধরতে পেরে ভিষণ খুশি।
এদিকে তাকে নিয়ে বেশ গর্ব করছেন পুলিশ কর্মকর্তারাও।
তবে সেই ভয়ানক সময়ের কথা মনে করে সাহসী আজহারউদ্দিন জানালেন, কমলমতি শিক্ষার্থীদের কী হবে তা ভেবে তখন মাথা ঠিক ছিল না। তাই তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আল্লাহ সাহায্য করেছেন। শুকরিয়া।
জানা যায়, আজহারউদ্দিনের বাড়ি কলকাতা সিটির পার্ক সার্কাসে। সিটি কলেজে শারীরবিদ্যা (ফিজিওলজি) নিয়ে পড়াশোনা। এরপর পুলিশে চাকরি। চাকরি সূত্রেই বছর আড়াই আগে মালদহে যাওয়া। যে স্কুলে হামলা হয়েছে সেটি ডিএসপি হিসাবে তারই এলাকার মধ্যেই পড়ে।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কেমন করে ধরলেন? বন্দুকধারীর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়ে নিজের জীবনের ঝুঁকির কথা মনে হয়নি আপনার?
আজহারউদ্দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে বলেন, ‘ওখানে গিয়ে দেখি ছাত্রদের মুখ শুকিয়ে গেছে। ভয়ে সবাই কাঁপছে। আমি এখনও বাবা হইনি। কয়েক বছর আগেই বিয়ে করেছি। কিন্তু মনে হচ্ছিল, ওরা আমার সন্তানের মতো। এমন দৃর্শ দেখে মাথা কাজ করছিল না। তেবে দ্রুত মাথা ঠান্ডা করে পরিকল্পনা করি।
আজহারউদ্দিন আরও জানান, গিয়ে দেখি, পুলিশকে দেখলেই বন্দুকধারী রেগে যাচ্ছেন। তাই আমি স্কুলের পিছন দিকে চলে যাই। পুলিশের পোশাকে কিছু করা যাবে না বুঝে স্থানীয় এক জনের কাছ থেকে টিশার্ট চেয়ে নিই। জামার বদলে টিশার্ট পরে জুতো খুলে হাওয়াই চটি পায়ে পড়ে নিই। বেল্টও খুলে ফেলি।
আগেই দেখেছিলাম, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ভয় পাচ্ছেন না বন্দুকধারী। ছবি তুলতে দিচ্ছেন, কথাও বলছেন। আমিও সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে মিশে যাই। উনি বুঝতে পারেননি, আমি পুলিশ। তার পরে মুহূর্তের সিদ্ধান্তেই ঝাঁপিয়ে পড়ি।
সেই সময়ে তো গুলি চালিয়ে দিতে পারতেন বন্দুকধারী! আজহারউদ্দিন বলেন, সেই চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু আমি আগেই বন্দুক ধরা হাতটা ওপরের দিকে করে দিই। তার পরে সর্বশক্তি দিয়ে মাটিতে ফেলি। আমাকে ব্যাকআপ দেওয়ার কথা আগেই পুলিশকর্মীদের বলে রেখেছিলাম। সেই মতো সবাই চলে আসেন। সবাই মিলে ধরে ফেলি।
এর পরে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে এলে দেখা যায় তার কাছে আরও একটি বন্দুক এবং ছুরি ছিল। সঙ্গে পেট্রল বোমাও।
আজহারউদ্দিন জানান, বড় বিপদ হতে পারত। বন্দুকধারীকে ধরে ফেলার পরেই শিক্ষার্থীদের বাইরে বের করে আনতে উদ্যোগী হই। কারণ, তখন ওদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। পরে সবাই আমাকে অনেক বাহ বাহ দেয়। স্কুলের শিক্ষার্থী ও তাদের বাবা-মারা আমার কাছে এসে কৃজ্ঞতা জানান। সবাই এমন উৎসাহ দেখে অনেক খুশি হয়েছি।
জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার জন্য সবাই তার প্রশংসা করছেন। তবে আজহারউদ্দিন বলছেন, ‘আমি আমার কর্তব্য করেছি।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন