বন্যার্তদের পাশে নোবিপ্রবি

ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে বন্যাকবলিত হয়েছিল দেশের ১১টির ও বেশি জেলা। এর মধ্যে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষীপুর ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বন্যা আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে এসেছিল শিক্ষার্থীরা। আর তার প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)।

নোয়াখালী জেলা প্লাবিত হওয়ার পর থেকে নোবিপ্রবির বিশটিরও অধিক ক্লাব, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা একযোগে সংগঠিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও অ্যালামনায়দের পরামর্শক্রমে উদ্ধার, আশ্রয় ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে।

শুরুতেই (২১ আগষ্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম ভবন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেয়া হয় এবং মহিলা ও শিশুদের অডিটোরিয়ামের নিচতলায় আর পুরুষদের অডিটোরিয়াম ভবনের পাঁচতলায় আলাদা থাকার ব্যাবস্থা করা হয়। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের জন্য ছাত্রী হলে থাকার ব্যবস্থা করা হয় এবং চারজন নবজাতক জন্ম নেয় এই পরিস্থিতিতে। পাশাপাশি নোবিপ্রবি কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ গবাদিপশুদের জন্য উপযুক্ত করা হয়।

এই কার্যক্রমটি তিন ভাগে ভাগ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এগুলো হলো উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও আশ্রয়কেন্দ্র।এই কার্যক্রমের পরিধি ছিল নোয়াখালীসহ ফেনী, কুমিল্লা ও লক্ষীপুরের বেশ কিছু অঞ্চল। শুরুতেই স্বেচ্ছাসেবী সংগ্রহ করে বিভিন্ন টিমে ভাগ করে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ শুরু হয় এবং প্রায় ১৫শ এর অধিক বানভাসিদের তারা উদ্ধার করে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে সক্ষম হন পাশাপাশি প্রায় ৩০.৫টন ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ১৫.৫টন শুকনা খাবার নোবিপ্রবির নিজস্ব সংগৃহীত তহবিল থেকে প্রদান করা হয়।

বাকি ত্রাণ এই কার্যক্রমে অংশ নেয়া দেশের ১৫ টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটির বেশি মেডিকেল কলেজ ,চারটির বেশি মানবাধিকার সংস্থা এবং বিভিন্ন জেলার ছোট বড় অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে সমন্বয় করে বিতরণ করা হয়।

এছাড়া নোবিপ্রবি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া বানভাসিদের সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি খাবার বিতরণ করা হয় বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থা থেকে এবং মেডিকেল সেবা নিশ্চিতে একযোগে কাজ করে নোবিপ্রবি কেন্দ্রীয় মেডিকেল সেন্টার, আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের টিম এবং নোবিপ্রবি ফার্মেসী বিভাগের উদ্যোগে ঢাকা থেকে আগত টিম। তাছাড়া নোবিপ্রবি-র বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উদ্যোগেও অনেক ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছিল।

বন্যা পরবর্তী দেশ পুনর্গঠনেও পিছিয়ে নেই নোবিপ্রবি। টানা এক সপ্তাহের বেশি সময়ের বন্যায় ক্ষেতে থাকা ধানের চারা পঁচে যায় ফলে দেশে খাদ্য সংকটের আশংকা রয়েছে। এ সংকট নিরসনের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে লেইট আমন ধানের চারা তৈরি করে তা প্রান্তিক কৃষকদের বিনামূল্যে বিতরণ করার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়।

এই কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন নোবিপ্রবি কৃষি বিভাগের সকল শিক্ষক, চলমান ব্যাচ ও প্রাক্তন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেই কৃষি বিভাগের রিসার্চ ফিল্ডের ২ একর জমিতে লেইর আমন ধানের চারা তৈরির কাজ চলমান। সেই সাথে বীজ বিতরণ ও সবজি চারা বিতরণ করা হবে বলে জানায় বিভাগটি।