বন থেকে এখন অক্সিজেনের চেয়ে কার্বনই বেশি নিঃসৃত হচ্ছে!

বনভূমি বিশ্বের ফুসফুস হিসেবে কাজ করে। আমাদের অযাচিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পোড়ানো কার্বন বনভূমির গাছপালা টেনে নেয়। তার বদলে আমাদের অক্সিজেন দেয়।

কিন্তু বনভূমির এ চিরন্তন ধারণা যদি উল্টে যায়? বনভূমি থেকে যদি অক্সিজেনের বদলে বেশি বেশি কার্বন উৎপাদন হয়? সম্প্রতি তেমন ঘটনাই ঘটেছে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমির ক্ষেত্রে।

সম্প্রতি গবেষকরা জানিয়েছেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমি আর আগের চরিত্রে নেই। অতীতের মতো এখন আর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমি কার্বন গ্রহণ করে অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে না। এর কারণ মানুষের অযাচিত কর্মকাণ্ড।

সম্প্রতি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমির এ ভূমিকার কথা জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি ও উডস হোল রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা সম্প্রতি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমির এ বিষয়টি সামনে এনেছেন। তারা বনভূমির এ বিষয়টি নির্ণয়ের জন্য উপগ্রহ চিত্র, লেজার প্রযুক্তি ও সরেজমিনে পরিদর্শন কৌশল কাজে লাগান ২০০৩ সাল থেকে।

এ বিষয়ে গবেষণাটির প্রধান ড. অ্যালেসান্ড্রো ব্যাচিনি বলেন, ‘গবেষণাটি থেকে আমরা যা দেখেছি, তা বন বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে।

আমরা যদি বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বিপজ্জনক পর্যায়ে যাওয়া থেকে থামাতে চাই, তাহলে আমাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে এবং বনভূমির কার্বন গ্রহণের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘বনভূমি হলো কার্বন গ্রহণ ও তা সংরক্ষণের একমাত্র প্রযুক্তি, যা নিরাপদ প্রমাণিত, সাশ্রয়ী, বড় পর্যায়ে কাজে লাগানোর উপযোগী এবং বিভিন্ন জাতিসত্তার ক্ষতি না করেই বাস্তবায়নযোগ্য। ’

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনভূমি থেকে এখন যে অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি তারা গ্রহণ করছে। এ কার্বন নিঃস্বরণের ৬০ শতাংশই ল্যাটিন আমেরিকা থেকে হচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, বিশেষ করে অ্যামাজন বনভূমির সাম্প্রতিক ক্ষয়ক্ষতি বিষয়টিকে বিপজ্জনক করে তুলেছে। এ ছাড়া বাকি ২৪ শতাংশ আসছে আফ্রিকা ও ১৬ শতাংশ আসছে এশিয়া থেকে।

বনভূমি থেকে নানা কারণে কার্বন নিঃস্বরণ বাড়ছে। বনের গাছগুলোকে উজাড় করে নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বনভূমি নেড়া হয়ে গেছে। এ ছাড়া রয়েছে বনের গাছ ব্যবহার করে জ্বালানির চাহিদা মেটানো কিংবা কৃষিকাজসহ নানা কারণে বনভূমি পুড়িয়ে দেওয়া। গবেষকরা বলছেন, অল্প এলাকায় বিষয়টি হয়ত উদ্বেগজনক হতো না। কিন্তু বিষয়টি যখন সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, তখন তা উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে।

সূত্র : ইন্ডিপেনডেন্ট