বরবটির কেজি ২ টাকা!

মাত্র তিনদিন আগেও বগুড়ার বাজারে যে বরবটির কেজি ছিল ৩০ টাকা, সোমবার সেই বরবটি বিক্রি হয়েছে দুই টাকা কেজি দরে। প্রতিমণ বরবটি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা, মিষ্টি কুমড়া ও ঝিঙ্গের দামেরও একই অবস্থা।

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে টানা পণ্য পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকায় বগুড়ার বৃহৎ সবজি বাজার মহাস্থান হাটে এ চিত্র দেখা গেছ। গত দুই দিন ধরে হাটে প্রচুর সবজি আমদানি হলেও ক্রেতার অভাবে দরপতন হয়েছে।

এদিকে ট্রাক শ্রমিকরা পণ্যবাহী শত শত ট্রাক মহাসড়কের যত্রতত্র আটকে দিলে মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়।

সড়ক-মহাসড়কে পুলিশি হয়রানি বন্ধ, পরিবহনের বাম্পার, সাইড অ্যাঙ্গেল এবং হুক খোলার সরকারি আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবিতে রোববার ভোর ৬টা থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার পণ্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। উত্তরবঙ্গ ট্রাক, ট্যাংক লরি, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এ ধর্মঘটের ডাক দেয়।

সোমবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ ট্রাক-ট্যাংক লরি-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ অধিকার আদায় বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান আকন্দ জানান, সাত দফা দাবি মেনে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাক হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সমাধানের প্রস্তাব না আসায় ধর্মঘট আরও ২৪ ঘণ্টা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, ঐক্য পরিষদের বগুড়ার নেতবৃন্দের সঙ্গে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। তাদের দাবি নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে অচিরেই সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।

এদিকে ধর্মঘটের সময় বৃদ্ধি করায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা শত শত পণ্যবাহী ট্রাক শ্রমিকরা মহাসড়কের মাঝপথে আটকে দেয়। ফলে মহাস্থান, বাঘোপাড়া, মাটিড়ালি, বনানী, শাকপালা, শেরপুর মাঝিড়া ছোনকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে করে সারারণ যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগে পোহাতে হয়।

পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটের কারণে উত্তরাঞ্চল থেকে সবজিসহ অন্যান্য পণ্য রাজধানীসহ অন্যান্য জেলায় সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারী বাজারে।

বগুড়ার মহাস্থান থেকে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রাকে করে সবজি রাজধানীসহ অন্যান্য জেলায় গেলেও পরিবহন বন্ধ থাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ফলে সবজির বাজারে ধস নেমেছে।

বগুড়ার মহাস্থান হাটের ব্যবসায়ী সুজাউল ইসলাম জানান, তিনি সাতদিন আগেও করলা বিক্রি করেছেন ২০/২২ টাকা কেজি। এখন সেই করলার দাম ২৫০ টাকা মণ। অর্থাৎ ৬ টাকা ২৫ পয়সা প্রতি কেজি।

গোলজার হোসেন নামের একজন জানান, ঝিঙ্গের কেজি এখন ৫/৬ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ২০ টাকা। মিষ্টি কুমড়ার দাম এক লাফে ১২শ টাকা মণ থেকে নেমে হয়েছে ৩০০/৪০০ টাকা।

আর শফিউল ইসরাম নামের একজন জানান, ৩০ টাকার বরবটি এখন ২টাকা কেজিতে কেউ নিচ্ছে না।

হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার অভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। শনিবারও যে সবজি বিক্রি করে কৃষক লাভের মুখ দেখেছে আজ সেই সবজি কেনার কেউ নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে কেউ ফেরত নিয়ে যাচ্ছে আবার কেউ বা পানির দরে সবজি বিক্রি করছেন।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ধর্মঘটের কারণে ট্রাক-ভ্যান না চলায় তারা সবজি কিনছেন না। ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

এদিকে ট্রাক ধর্মঘটের কারণে বগুড়া শহরের বাজারগুলোতেও সবজি, মাছ, মুরগিসহ মাংসের সংকট দেখা দিয়েছে। একদিনের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। মাছের দাম ধরন ভেদে কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর হাটে দাম না থাকলে খুচরা বাজারে সকল প্রকার সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং মাংসের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ট্রাক ধর্মঘটে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাছ, মুরগি বা সবজি আসছে না। আশপাশের এলাকা থেকে সীমিত মাছ ও সবজি আসছে। ফলে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে।