বরিশালে দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে সাংবাদিক কার্ড
নির্বাচন উপলক্ষে বরিশাল জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের অনুমতি কার্ড দলীয় নেতাকর্মীদের দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার থেকে শুরু করা এই কার্ড বিতরণ নিয়ে সাংবাদিক অঙ্গনেও ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, যুবদল এবং যুবলীগ নেতাকর্মী থেকে শুরু করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভুয়া পত্রিকা দেখিয়ে সাংবাদিকদের কার্ড নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক সাংবাদিক।
সরেজমিনে শুক্রবার বরিশাল জেলা প্রশাসন ও জেলা রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ে গিয়ে একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। নামসর্বস্ব পত্রিকা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা রিটার্নিং অফিসারের স্বাক্ষরসংবলিত সাংবাদিক কার্ড নিয়ে যাওয়ার চিত্র ছিল ওপেন-সিক্রেট। এদের মধ্যে মাইনুল ইসলাম নামে এক যুবলীগ নেতাকে কার্ড কীভাবে পেল জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ‘আপাতত এখন থেকে আমি সাংবাদিক। পত্রিকার নাম, ভোটার আইডি কার্ড দিয়েছি এবং কিছুক্ষণ পরেই ম্যাজিস্ট্রেট ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের পাস কার্ড দিয়ে দিয়েছে।’ এরপর তাকে কোন পত্রিকায় কাজ করেন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এর কোনো উত্তর না দিয়ে ওই স্থান থেকে সটকে পড়েন। তিনি ছাড়াও আরও অনেক দলীয় নেতাকর্মীদের দেখা গেছে সাংবাদিকদের জন্য ইস্যু করা অনুমতি কার্ড নিয়ে যাওয়ার চিত্র।
রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়ে উপস্থিত এক সাংবাদিক জানান, দুই ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম পেশাগত কাজের জন্য সাংবাদিকদের জন্য করা ইস্যু কার্ড নেয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু দেখছি দলীয় নেতাকর্মীরা খুব সহজে সাংবাদিকদের জন্য করা কার্ড নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন। কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই পেশায় নিয়োজিতদের জন্য ইস্যু করা কার্ড উন্মুক্তভাবে বিতরণ করা প্রকৃত সাংবাদিকদের জন্য শুভকর নয়।
বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস জানান, ভুয়া সাংবাদিক অর্থাৎ যাদের সাংবাদিক অঙ্গনে কোনো দিন দেখা যায়নি তারা যদি নির্বাচন উপলক্ষে সাংবাদিকদের জন্য ইস্যু করা কার্ড নিয়ে থাকেন তাহলে বিষয়টি হুমকিজনক। এই বিষয়টি রিটার্নিং অফিসারের গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। তা না হলে সাংবাদিকদের নাম ব্যবহার করে এই ভুয়া সাংবাদিকরা নির্বাচনে অসুবিধা করতে পারে।
নিউজ এডিটরস কাউন্সিলর বরিশালের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী হাসান জানান, সাংবাদিকতার নাম ব্যবহার করে দলীয় লোকজন নির্বাচন উপালক্ষে যদি কার্ড নিয়ে থাকে তাহলে তারা নির্বাচনের পরিবেশ ভণ্ডুল করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল এবং বিরোধী দলের আলোচনা সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনের পরিবেশ যতটুকু তৈরি হয়েছে তা নষ্ট করবে। আমি মনে করি এই নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা সঠিক পরিচয় জেনে সাংবাদিকদের কার্ড প্রদান করেন।
এই বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, সাংবাদিকদের অনুমতি কার্ড দেওয়ার স্থানে একজন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। পাশাপাশি সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহের অনুমতি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এখন কারা দলীয় নেতাকর্মী সেটা যাচাই-বাছাই করা তো আমাদের কাজ না। আমরা পত্রিকার কাগজপত্র ও ভোটার আইডি কার্ড যাচাই-বাছাই করে সাংবাদিকদের জন্য কার্ড ইস্যু করছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন