বরিশালে নির্যাতনের শিকার দুই গৃহকর্মী উদ্ধার
বরিশালে নির্যতনের শিকার দুই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে গৃহকর্মী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী দম্পতিকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর বাজার রোড এলাকা থেকে গৃহকর্মীদের উদ্ধার ও দম্পতিকে আটক করা হয়।
আটকরা হলেন বাজাররোডে অবস্থিত হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান এ অ্যান্ড জে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জুয়েল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইশরাত জাহান দিনা। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় আটকদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীদের কাছ থেকে জানা গেছে, আনুমানিক ১৩ বছর বয়সী আশফিয়া ও আয়শা প্রায় দেড় বছর ধরে জুয়েল আহমেদের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো। কাজে যোগ দেওয়া পর থেকে গৃহকর্ত্রী ইশরাত জাহান ও গৃহকর্তা জুয়েল আহমেদ তাদের ওপর নির্যাতন চালাতেন।
গত রবিবার রাতে তাদের ওপর একই ধরনের নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পরের দিন সোমবার সকালে আশফিয়া নামের গৃহকর্মী ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। সে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নগরীর উত্তর পশ্চিম অংশের শেষ প্রান্ত দক্ষিণ বাঘিয়া এলাকায় গিয়ে একটি বাড়িতে ওঠে। ওই বাড়ীর লোকজনের সন্দেহ হলে তারা আশফিয়ার কাছে জানতে চান।
আসফিয়া ওই বাড়ির লোকজনকে সব কিছু খুলে বললে মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমান বন্দর থানা পুলিশকে জানানো হয়। বিকেল ৩টায় বাঘিয়া থেকে পুলিশ আশফিয়াকে উদ্ধার করে তার কাছে পুরো ঘটনাটি শোনেন পুলিশ কর্মকর্তারা। পরে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার এস এম রুহুল আমিনের নেতৃত্বে বাজাররোডে অবস্থিত জুয়েলের বাসায় অভিযান চালানো হয়।
এ সময়ে জুয়েলের বাসা থেকে নির্যাতনের শিকার অপর গৃহকর্মী আয়শা কে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি গৃহকর্তা জুয়েল ও তার স্ত্রী ইশরাত জাহান দিনাকে আটক করে। নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী আশফিয়া ও আয়েশাকে ভিক্টিম সার্পোট সেন্টারে রাখা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার আসফিয়া জানায়, দেড় বছর ধরে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল ওই বাসায়। ঠিকমতো খাবার দিলেও নির্যাতন করা হত প্রচুর। ছোটখাটো ভুল ত্রুটি হলেই গৃহকর্ত্রী ইশরাত জাহান দিনা ও গৃহকর্তা জুয়েল আহমেদ দুইজনে মিলে নির্যাতন চালিয়ে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন। এমনকি হাত পায়ের আঙ্গুলে সুই ফুটাতো হতো। তাদের নির্যাতনের হাত থেকে বাচঁতে পালিয়ে যায় সে। পরে বাঘিয়া এলাকার রেনু বেগমের বাসায় গিয়ে পানি পান করতে চায়। সেখানে বসে ওই বাড়ির লোকজনকে ঘটনা খুলে বলে। পরে তারা থানায় জানালে পুলিশ তাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার এস এম রুহুল আমিন জানান, দুই গৃহকর্মীকে এই বাসায় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো প্রাথমিকভাবে এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। পাশাপাশি এদের দুইজনকেই জোর করে আটকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে গৃহকর্মীদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে আঘাতের চিহ্নে। তবে গৃহকর্মীদের শারীরিক দৈন্যতার কারণে এখন পর্যন্ত তাদের সঠিক বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ওই বাসার গৃহকর্তা জুয়েল ও তার স্ত্রী দিনাকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গৃহকর্ত্রী ইসরাত জাহান দিনার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি উচ্চ শিক্ষিত একজন নারী। এমন শিক্ষিত লোকজনদের দ্বারা এমন আচরণ আসলেই খুব দুঃখজনক।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সহকারী কমিশনার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত দুইজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে সোমবার রাতেই কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন